বিল বিতর্কে তেলেঙ্গানার রাজ্য-রাজভবন সম্পর্ক এমন তলানিতে ঠেকেছে যে বছর দুই হল রাজ্যপাল তামিলিসাই সুন্দররাজন ও মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। এমনকী স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসেও তাঁরা মুখোমুখি হন না। এবার সেই বিল বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল সুন্দররাজনকে। বিধানসভায় পাশ হওয়া ১০টি বিলে সম্মতি না দিয়ে ফেলে রাখার কারণে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং পিএস নরসিমহার বেঞ্চ তেলেঙ্গানার রাজ্যপালের অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছে। শীর্ষ আদালতের মতে, রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল মাসের পর মাস আটকে রাখা সংবিধান অবমাননা। তেলেঙ্গানার এই মামলার সুবাদে শীর্ষ আদালত সব রাজ্যপালকে এই ব্যাপারে তাঁদের কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
শীর্ষ আদালতের সোমবারের রায়ের পর চর্চা শুরু হয়েছে, এরপর কী করবেন বাংলার রাজ্যপাল আনন্দ বোস, তামিলনাড়ুর এন রবি প্রমুখ। তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল সেখানকার ডিএমকে সরকারের প্রায় এক ডজন বিল আটকে রেখেছেন বলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের অভিযোগ। সেই তালিকায় অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করতে পাশ হওয়া বিলটিও ছিল। রাজ্য সরকার সেটি দ্বিতীয়বার বিধানসভায় পাশ করানোয় আইন ও সাংবিধানিক প্রশ্নের মুখে রাজ্যপাল রবি দ্বিতীয়বার পাঠানো বিলটি আর আটকে না রেখে গত সপ্তাহে অনুমোদন করে দিয়েছেন। কিন্তু বাকি বিলগুলির ভবিষ্যৎ এখনও অজানা। তামিলনাড়ু সরকার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকেছে। স্ট্যালিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এরপর শেষ রাস্তা আদালত।
অন্যদিকে, বাংলায় মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য করা নিয়ে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল নিয়ে রাজভবনের গড়িমসি নতুন নয়। আগের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর ওই বিল আটকে রেখেছিলেন। বর্তমান রাজ্যপাল আনন্দ বোস প্রায় ছ’মাস হল দায়িত্ব নিলেও এখনও ওই বিলে সায় দেননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত সপ্তাহেই জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যপাল বিল আটকে রাখলে রাজ্য সরকার আপাতত অর্ডিন্যান্স জারি করে সরকারি সিদ্ধান্ত বলবৎ করতেই পারে। তবে এখনই সেই পথে এগনোর সিদ্ধান্ত হয়নি। নবান্নের একটি সূত্রের খবর, বিলটি দ্বিতীয়বার বিধানসভায় পাশ করালে রাজ্যপালের সেটিতে সম্মতি না দিয়ে উপায় থাকবে না। সে জন্য রাজভবন থেকে আগের বিলটি সরকারের কাছে ফেরৎ আসা দরকার।
ওয়াকিবহাল মনে করছে, বিলে ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সোমবারের রায়ের পর সব রাজ্যপালকেই এই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করতে হবে। সোমবার শীর্ষ আদালত সংবিধানের ২০০ নম্বর অনুচ্ছেদটিতে রাজ্যপালদের চোখ বুলিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ওই অনুচ্ছেদটিতে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে রাজ্যপালদের সম্মতি বা অসম্মতি প্রদান সংক্রান্ত বিধি নিয়মের উল্লেখ রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাজ্যপালদের কাছে বিধানসভা থেকে পাশ হওয়া বিল আসার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটির ব্যাপারে তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাঁরা বিলটিতে অসম্মতি জানাতে চাইলেও তা দ্রুত জানাতে হবে। যদি কোনও রাজ্যপাল মনে করেন, বিলটির বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সম্মতি দরকার তবে সে ব্যাপারেও দ্রুতই পদক্ষেপ করতে হবে। মোট কথা কোনও ভাবেই বিল রাজভবনে ফাইল বন্দি করে রাখা যাবে না।