ভারতবর্ষে প্রতি দশ বছর অন্তর জনগণনা হয়। যদিও মোদী-জমানায় সেসব বিলকুল অতীত। দেশে সর্বশেষ আদমশুমারি হয়েছিল ২০১১ সালে। তারপর কেটে গিয়েছে ১২ বছর। কিন্তু জনগণনা আর হয়নি। আর সে কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের নানান প্রকল্প রূপায়ণে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। যার জেরে ভুগছে জনসাধারণ। কেন্দ্রের প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশবাসী। কেন্দ্রীয় সরকারের যেকোনও প্রকল্প বা ভর্তুকি প্রদান কর্মসূচীর প্রধান ভিত্তিই হল জনগণনা। করোনার কারণে ২০২০ সালে আদমশুমারি করা যায়নি। এখন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও, জনগণনা কবে হবে, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে মোদী সরকার। সংসদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বারবার জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই জনগণনা হবে। মোদী সরকার জানিয়ে দিয়েছে, দেশ করোনা পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে মোদী সরকারের দাবি, ক্রমেই নাকি দেশে করোনা কাটিয়ে স্বাভাবিক অর্থনীতির পথে অগ্রসর হয়েছে দেশ। কিন্তু জণগণনা বিষয়ে তারা স্পিকটি নট।
স্বাভাবিকভাবেই বারবার প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। মোদী সরকারকে আক্রমণ শানিয়ে তাদের দাবি, সাধারণ জনগণনা এবং জাতিগণনা কেন হচ্ছে না, তার জবাব দিক মোদী সরকার। জনগণনা না হওয়ায় কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে পরিসংখ্যান নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের অন্দরে খবর, গ্রামোন্নয়ন, স্বাস্থ্য, পঞ্চায়েতিরাজ, নগরোন্নয়ন এবং অর্থমন্ত্রকের নানাবিধ প্রকল্পগুলির রূপায়ণ এবং অর্থবরাদ্দ জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে করা হয়। কিন্তু জনগণনা না হাওয়ায়, সেগুলি সঠিক সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছনোর বিষয়ে নিশ্চিত হাওয়া যাচ্ছে না। কারণ পরিসংখ্যানই নেই। ২০১১ সালের তথ্য-পরিসংখ্যান অনুযায়ী বারো বছর পরে, আর কোনও কর্মসূচী চালানো সম্ভব নয়। জনগণনা না হওয়ার জেরে ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভেও সামগ্রিকভাবে করা যাচ্ছে না। বেশ কয়েকবছর ধরে কাজ চালাতে, আধার কার্ডের মোট সংখ্যাকে ধরেই এগোচ্ছে সরকার। সেই তথ্য অনুযায়ী অর্থবরাদ্দ এবং উপভোক্তা তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আবার মোদী সরকারের দাবি, দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ ভুয়ো আধার কার্ড রয়েছে। ফলে কোন আধার কার্ড প্রকৃত নাগরিকের, আর কোনটা ভুয়ো, তা যাচাই না করেই প্রকল্পের কাজ চলছে। সেন্সাসের নামগন্ধ নেই, অথচ ভুয়ো আধার কার্ডের রমরমা, এই উভয় সঙ্কটের শিকার আম জনতা। যারা কেন্দ্রের প্রকল্পের আওতায় থাকা দরকার, তারা বাদ পড়ছেন। আগামী ২০২৪ সালে লোকসভা, ফলে আদমশুমারি হবে না। ততদিন অবধি এমন গয়ংগচ্ছ ভাবেই চলবে সবকিছু? উঠছে প্রশ্ন। সমালোচনায় সরব হয়েছে একাধিক মহল।