গোষ্ঠীকোন্দল এখনও পিছু ছাড়ছে না গেরুয়াশিবিরের। একুশের বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত বঙ্গ বিজেপি। সামনেই আবার পঞ্চায়েত নির্বাচন। দলের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভের আঁচ ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে পদ্ম-নেতৃত্ব। এবার আগাম সতর্ক হয়েই পঞ্চায়েতে জেলার নেতাদের জন্য একগুচ্ছ গাইডলাইন বেঁধে দিল দিল্লী। জানাল, পঞ্চায়েতে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সেই এলাকার আমজনতার মতামত নিতে হবে। পাশাপাশি, উপর থেকে জেলা বা রাজ্যনেতারা কাউকে প্রার্থী হিসাবে নিচুতলায় চাপিয়ে দিতে পারবে না। একইসঙ্গে গাইড লাইন বা নির্দেশিকায় বলে দেওয়া হয়েছে, অন্য দল থেকে কেউ এলেই তাকে প্রার্থী করে দেওয়া যাবে না। সে জেলা পরিষদ হোক, পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েত হোক। দলে নতুন আসাদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিতে স্থানীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের মধ্যে থাকা ক্ষোভ-বিক্ষোভ যাতে বিড়ম্বনায় না ফেলে তাই এমনই কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। আর পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে এই নির্দেশিকার বিষয়টি নরেন্দ্র মোদী দুই সেনাপতি অমিত শাহ ও জেপি নাড্ডাকেও জানিয়েছেন বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা।
প্রসঙ্গত, দলের অন্দরে অমিত শাহর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সুনীল বনশল এবং মঙ্গল পাণ্ডে। এই দু’জনকেই বাংলার পর্যবেক্ষক করেছেন শাহ। জেলায় জেলায় ঘুরে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্টও গত কয়েকমাসে সংগ্রহ করেছেন সুনীল ও মঙ্গল। বঙ্গ বিজেপির সংগঠনে কোথায় ত্রুটি রয়েছে, বুথের দুর্বল অবস্থা, নিচুতলায় কর্মীর অভাব, ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে পুরনোদের মধ্যে। এসব কিছুই রিপোর্টে উল্লেখ করে অমিত শাহ ও নাড্ডার কাছে জমা দিয়েছেন তাঁরা। একুশের ভোটের পর থেকেই বিজেপির গ্রাফ নিম্নমুখী। দলের মধ্যে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব চলছেই। এসব কারণ, পাশাপাশি দলীয় রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে একগুচ্ছ গাইড লাইন দেওয়া হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বুথ ও মণ্ডল কমিটি। পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীর বিষয়টি দেখবে জেলা কমিটি। এবং জেলা পরিষদের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে রাজ্য কমিটি। এক্ষেত্রে জেলা কমিটির সুপারিশ থাকতে পারে।
দেখে নেওয়া যাক, পঞ্চায়েত সংক্রান্ত নির্দেশিকায় কী কী রয়েছে :
১. উপর থেকে প্রার্থী চাপানো যাবে না। নিচুতলার মতকে গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থাৎ, একুশের ভুল করতে চাইছে না গেরুয়া শিবির।
২. প্রার্থী করার ক্ষেত্রে আমজনতার মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
৩. নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা পুরনো ও পরিচিতদের সক্রিয় করা দলের কাজে। প্রয়োজনে তাঁদের মধ্যে পরিচিত মুখদেরও প্রার্থী করা যেতে পারে।
৪. আর ভোট বাড়াতে নিচুতলার দরজাও সতর্কভাবে খোলা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সিউড়িতে এসে দলীয় বৈঠকে অমিত শাহও বলে গিয়েছেন, অন্য দলের থেকে কেউ আসতে চাইলে তাদের নিতে হবে।
৫.গতবার যেসব প্রার্থী পদ্মচিহ্নে জয়ী হয়েছিলেন, সক্রিয় থাকলে বা যোগাযোগ করা গেলে তাঁদের প্রার্থী করতে হবে।
উল্লেখ্য, দলের তরফে এই গাইডলাইন বেঁধে দেওয়া হলেও প্রশ্ন উঠছে বুথ কমিটি নিয়ে। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বুথে কমিটি হয়েছে। তা হলে সিংহভাগ বুথে যেখানে কমিটি নেই সেখানে এইসব গাইড লাইন পালিত হবে কী করে? পর্যাপ্ত কর্মী বা দলের প্রার্থী কি সেখানে আদৌ পাওয়া যাবে? গেরুয়াশিবিরের অন্দরে ঘনীভূত হয়েছে এমনই সংশয়। ফলত চাপে নেতৃত্ব।