মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বারবার বাংলা ভাগ করে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবি তুলেছেন বিজেপির একাধিক নেতা-সাংসদ। গোর্খাল্যান্ড, কামতাপুর থেকে জঙ্গলমহল, বরাবরই আলাদা রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করে এসেছে বিজেপি। বাজপেয়ী আমলে তিন নতুন রাজ্য গড়েছিল এনডিএ সরকার। তৈরি হয়েছিল উত্তরাখণ্ড, ছত্তিশগড় এবং ঝাড়খণ্ড। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে মোদী সরকার জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করেছে। বর্তমানে ভারতে ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। জানা যাচ্ছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনে জিতলেই মোদী সরকার দেশকে ৫০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাঙবে। যে সব ক্ষুদ্র রাজ্যের দাবি ক্রমে জোরালো হচ্ছে, সেগুলি একে একে বাস্তবায়িত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ফের একটি রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে বিজেপির। আর তাতেই, আরেকবার বঙ্গভঙ্গের আশঙ্কা মাথাচাড়া দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ এবং বাংলার মতো বড় রাজ্যগুলিকে ভাঙা হবে। সেই লক্ষ্য পূরণেই গড়া হবে দ্বিতীয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন। জনগণনার রিপোর্টের ভিত্তিতে কাজ করবে সেই কমিশন। ২০২১ সালে জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে জনগণনার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতি স্তিমিত হলেও, কোনও অজ্ঞাত কারণে এখনও জনগণনা শুরু হয়নি।
সূত্র জানিয়েছে, লোকসভা ভোটের আগে আদমশুমারি হবে না। জনগণনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সামনে আসলেই রাজ্য পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া আরম্ভ হতে পারে বলে খবর। উল্লেখ্য, আগামীতে লোকসভা আসনও বাড়াতে চলেছে মোদী সরকার। সেই পথ সুগম করতে বৃহৎ রাজ্য ভেঙে নতুন নতুন রাজ্য গঠন করা খুবই জরুরি। প্রায় সত্তর বছর ধরে মহারাষ্ট্র ভেঙে বিদর্ভ হওয়ার কথা শোনা যায়, একদা তা ঠিকও হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি। মায়াবতী নিজের জমানায় উত্তরপ্রদেশ ভেঙে পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমপ্রদেশ, বুন্দেলখণ্ড এবং অবধপ্রদেশ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও তা বিধানসভায় পাশ হয়ে থমকে যায়। গুজরাত ভেঙে সৌরাষ্ট্র গঠনের দাবি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চলে আসছে। এছাড়াও রাজস্থান ভেঙে মরল প্রদেশ, বিহার ভেঙে মিথিলাঞ্চল গড়ার প্রস্তাবও শোনা যায়। বাংলাও ব্যতিক্রম নয়, উত্তরবঙ্গ ভেঙে পৃথক রাজ্যের দাবি। এছাড়া গোর্খাল্যান্ড, জঙ্গলমহল, কামতাপুর নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি তোলে গেরুয়া শিবির। যদিও সব দাবি মানা হবে, কখনই এমনটা নয়। রাজনৈতিক ফায়দা দেখেই এগোবে পদ্ম-বাহিনী। তবে সবটা নির্ভর করছে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের উপরই।