বাংলায় বরাবরই জনপ্রিয় হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত নানান জনমুখী প্রকল্প। তার মধ্যে অন্যতম হল ‘স্বাস্থ্যসাথী’। রাজ্যের এই স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্প ইতিমধ্যেই সাফল্য অর্জন করেছে। টাকার অভাবে বা বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয়বহুল চিকিৎসা পরিষবা টানতে অক্ষম মানুষেরা এখন মুখ্যমন্ত্রীর দৌলতে কার্যত নতুন করে বাঁচার আলো দেখতে পেয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, বাংলার হাজার হাজার মানুষ যারা টাকার অভাবে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা চিকিৎসা অগ্রাহ্য করে গিয়েছেন তাঁরাই এখন এগিয়ে আসছেন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে গত অর্থবর্ষে বাংলার বুকে শুধু ৩টি বড় চিকিৎসার জন্য ২২৩ কোটি টাকার চিকিৎসা পরিষেবা নিয়েছেন বাংলার মানুষ। এই ৩টি চিকিৎসা হল হার্টের অপারেশন, ক্যান্সারের চিকিৎসা এবং হাঁটু বদল।
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের দাবি, হার্টের অপারেশন, ক্যান্সারের চিকিৎসা এবং হাঁটু বদল – এই ৩টি ক্ষেত্রেই চিকিৎসা ব্যয়বহুল। বেসরকারি হাসপাতালে বিপুল খরচ করে এই ধরনের অপারেশন করানো যাঁদের পক্ষে একপ্রকার অসম্ভবই ছিল, তাঁরাই এখন সুস্থ হতে পারছেন রাজ্য সরকারের প্রকল্পের দৌলতে। আমজনতা এই প্রকল্পের মাধ্যমে এখন এই ৩টি ক্ষেত্রেই সহজেই চিকিৎসা করাতে পারছেন বাংলার জনতা। দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ উপভোক্তাই স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে হার্টের বড়সড় অপারেশন করিয়ে নিতে আগ্রহী। এরপরেই রয়েছে মহার্ঘ ক্যান্সারের চিকিৎসা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে হাঁটু বদলের মতো ব্যয়বহুল অপারেশন। গত অর্থবর্ষে স্বাস্থ্যসাথীর দৌলতে বিভিন্ন ধরনের হার্টের অপারেশনই হয়েছে ১৫০ কোটি টাকারও বেশি অর্থমূল্যের। অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি, বাইপাস, ভালভ, পেসমেকার বসানো, কী নেই তাতে!
আবার বাড়িতে কারও ক্যান্সার ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট সবার কী মানসিক অবস্থা হয়, তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। গত এক বছরে স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে বেসরকারি ও বড় সরকারি হাসপাতালে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির সুবিধা পেয়েছেন হাজারও ক্যান্সার আক্রান্ত। দেখা যাচ্ছে, ইমেজ গাইডেড ও লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটরের মতো অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি সহ প্রায় ৫০ কোটি টাকার চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পে। আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস কাহিল করছে চল্লিশের কোঠা থেকেই। হার্ট, ক্যান্সারের পরই সবচেয়ে বেশি মানুষ স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা নিয়েছেন হাঁটু বদল, জয়েন্ট বদল, কোমর বদলের মতো বড় অপারেশন করাতে। ১ বছরে রাজ্যবাসী প্রায় ২৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা অর্থমূল্যের জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি করিয়েছেন। সবমিলিয়ে রাজ্যবাসীর মুশকিল আসান হয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে স্বাস্থ্যসাথী।