ইতিমধ্যেই তুঙ্গে পৌঁছেছে বিতর্কের ঝড়। অতিসম্প্রতি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)-এর পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে একাধিক বিষয়। ফের শিক্ষায় গৈরিকীকরণের অভিযোগ উঠেছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। এবার এ নিয়ে প্রবল উদ্বেগ প্রকাশ করলেন দেশের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদরা। করোনা অতিমারীতে পড়াশোনার ক্ষতি এবং পড়ুয়াদের উপরে চাপের কথা মাথায় রেখে পাঠ্যক্রমে কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে বলে এনসিইআরটি-র তরফে যে দাবি করা হয়েছে, বিবৃতি জারি করে পুরোপুরি তা খারিজ করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি তাঁদের বক্তব্য, পাঠ্যপুস্তক থেকে কিছু ঐতিহাসিক তথ্য মুছে ফেলে ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, হোয়াসটঅ্যাপ-সহ বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে ইতিহাসের খোলনলচে বদলানোর প্রবণতা নিয়েও সরব হয়েছেন রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিবের মতো বিখ্যাত ইতিহাসবিদরা।
প্রসঙ্গত, পাঠ্যবই ঘিরে সাম্প্রতিক বিতর্কের সূত্রপাত এনসিইআরটি-র দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই নিয়ে। ওই বই থেকে মুঘল যুগের ইতিহাস বাদ পড়েছে বলে শোরগোল শুরু হয়। এছাড়াও, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই থেকে বাদ গিয়েছে গান্ধী-হত্যা সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য। একাদশ শ্রেণির সমাজবিদ্যার বই থেকে বাদ পড়েছে গুজরাত হিংসার উল্লেখ। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সমাজবিজ্ঞানের কোনও বইতেই এখন আর ওই ঘটনার বিন্দুবিসর্গ নেই। এনসিইআরটি-র বক্তব্য, রাতারাতি কিছু বদল হয়নি। অতিমারীকালে পড়ুয়াদের উপর পড়াশোনার চাপের বিষয়টি নজরে রেখে গত বছরই পাঠ্যক্রমে কিছু বাদ পড়েছে। তার প্রেক্ষিতে ইতিহাসবিদদের প্রশ্ন, এখন তো আর দেশে কোভিড পরিস্থিতি নেই। এখন তো স্কুলে পড়াশোনাও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গিয়েছে। অনলাইনেও এখন পড়াশোনা হয় না। তা হলে এখনও কেন পাঠ্যক্রম কাটছাঁট করা হচ্ছে? উঠেছে এমনই প্রশ্ন।
উল্লেখ্য, উক্ত বিবৃতিতে রোমিলা, ইরফান ছাড়াও স্বাক্ষর রয়েছে ইতিহাসবিদ জয়তী ঘোষ, মৃদুলা মুখোপাধ্যায়, অপূর্বানন্দ, উপিন্দর সিংহদের। ঘটনাচক্রে, এঁদের অধিকাংশই মোদী সরকারের সমালোচক বলে পরিচিত। বিবৃতিতে তাঁদের মত, পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমেই ছাত্রছাত্রীদের ইতিহাস সচেতন করা তোলা উচিত। সেই পথ থেকে সরে এসে যদি এ ভাবে পাঠ্যক্রম কাটছাঁট করা হতে থাকে, তাতে ‘ছদ্ম ইতিহাস’-এর পরিসর তৈরি হতে থাকে। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘‘এখন তো হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্য সমাজমাধ্যমগুলির মাধ্যমে অন্য ইতিহাস ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে।’’ মুঘল অধ্যায়, গান্ধীহত্যার খুঁটিনাটি এবং গুজরাত প্রসঙ্গ বাদ পড়া নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহলই। গোড়া থেকে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। মোদী সরকারকে কড়া কটাক্ষে বিঁধেছেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বল। “আধুনিক ভারতের ইতিহাস ২০১৪ থেকে শুরু করলেই হয়!”, টুইটে লিখেছেন তিনি।