চরম অস্বস্তির মুখে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। দোরগোড়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে খোদ শুভেন্দুর খাসতালুক তথা নির্বাচনী কেন্দ্র নন্দীগ্রামেই বড়সড় ভাঙন ধরল পদ্মশিবিরে! গতকাল, অর্থাৎ শনিবার সেখানে গণইস্তফা দিলেন একাধিক বিজেপি নেতা-কর্মী। এমনকী, দল ছাড়লেন নন্দীগ্রামের মণ্ডল সভাপতিও। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন গণইস্তফার ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে ছড়িয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য। জানা গিয়েছে, নন্দীগ্রাম মণ্ডল ৪- এর সভাপতি তথা নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের দাপুটে নেতা চন্দ্রকান্ত মণ্ডল সহ সভাপতি কমিটির সকলে বিজেপির দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ইস্তফা পত্রে লেখা হয়েছে, দলীয় সাংগঠনিক পদ্ধতি না মেনে মণ্ডলে বিভাজনের কারনেই এই ইস্তফার সিদ্ধান্ত। ইতিমধ্যেই তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই ইস্তফাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে খবর। ঘটনার ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিপাকে পদ্ম-নেতৃত্ব।
উল্লেখ্য, নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের দাপুটে নেতা চন্দ্রকান্ত দীর্ঘদিন ধরেই দলের সদস্য ছিলেন। নন্দীগ্রামের ৪ নম্বর মণ্ডলের সভাপতিও তিনি। সেই চন্দ্রকান্তই তাঁর ক্ষোভের কথা জানিয়ে ইস্তফা দিয়েছেন। চন্দ্রকান্ত মণ্ডল ইস্তফাপত্রে লিখেছেন, “আমার মণ্ডলে ভারতীয় জনতা পার্টির যে সাংবিধানিক পদ্ধতি তা না মেনে মণ্ডল বিভাজন করা হল, তাতে আমার মনে হয় না আমার এই পদে থাকা উচিত। আমার কমিটির সকলেই একই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই আমরা সকলেই সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।” তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রকে বিজেপি ৪টি মণ্ডলে ভাগ করে সংগঠন চালাত। এবার সেই ৪ নম্বর মণ্ডলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেখানে বয়াল-১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মণ্ডলের দায়িত্বে আছেন চন্দ্রকান্ত মণ্ডল এবং খোদামবাড়ি-১ এবং ২ অঞ্চলে নতুন মণ্ডল সভাপতি হয়েছেন দীপঙ্কর নায়েক। এই নিয়েই অসন্তোষ ঘনীভূত হয়েছে। চন্দ্রকান্তদের দাবি, সাংবিধানিক পদ্ধতি মেনে এই বিভাজন হয়নি। নন্দীগ্রামেই এ ভাবে একটি মণ্ডলকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যা বিজেপির সংবিধানের বিরোধী বলেই জানিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি, দলত্যাগী চন্দ্রকান্তবাবু বলেছেন, “আজ অনেক দুঃখে, কষ্টে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার পুরো পরিবার বরাবর বিজেপিকে সমর্থন করে এসেছে। বাবাও গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু, আমি মণ্ডল সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও আমার সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই মণ্ডল বিভাজনের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে আমি ব্যথিত। জেলা পরিষদ ভাগ হল না, কিন্তু মণ্ডল ভাগ করা হল কার স্বার্থে!” ইস্তফার ঘটনায় বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেন, “এটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। হওয়ার ছিল, তাই হয়েছে। আরও অনেক কিছু ঘটবে যা বিজেপির অস্বস্তি বাড়াবে। কিন্তু সেটা ঘটবে এবং মেনেও নিতে হবে। কারণ শুভেন্দু অধিকারী স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের দলটাকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত করেছিলেন, একইভাবে তিনি বিজেপিতে গিয়েও স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা নিয়ে কাজ করছেন।” এখানেই থেমে থাকেননি বাপ্পাদিত্যবাবু। “নন্দীগ্রামের মানুষ সবই দেখছেন, বুঝতে পারছেন। এখনও আরও কেউ দল ছাড়তে পারে, অন্য দলে যোগও দিতে পারে। সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে এটা শুধুমাত্র ট্রেলার ছিল, পিকচার এখনও বাকি রয়েছে”, পদ্মশিবিরকে একহাত নিয়ে বক্তব্য তাঁর।