অনটন তাঁদের নিত্যদিনের সঙ্গী। স্থানীয় একটি ভবনের দেখাশোনা করেন স্বামী। বর্তমানে বেতন বেড়ে হয়েছে মাসে মাত্র ৪ হাজার টাকা। টিনের দোচালা ঘর। তবুও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সরকারি ঘর ফিরিয়ে দিয়ে অনন্য নজির গড়লেন আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের বিবেকানন্দ ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২/১৬০ নম্বর বুথের তৃণমূল কংগ্রেস দলের পঞ্চায়েত সদস্যা মনিকা পণ্ডিত। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে আলিপুরদুয়ার জংশন চেচাখাতা বয়েজ মিশন রোড এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যা হন মনিকা পণ্ডিত। তার পর থেকে মনিকাদের আর্থিক অবস্থার তেমন কোনও উন্নতিতো হয়ইনি। উলটে এখন টিনের চাল দিয়ে বৃষ্টি হলেই জল পরে। তবুও আবাস যোজনার ঘর ফিরিয়ে দিয়েছেন মনিকা। বলেছেন, “আমার স্বামীর নামে একটি ঘর অনুমোদন হয়েছিল। কিন্তু আমাদের থেকেও গরীব মানুষ এলাকায় রয়েছে। সেই কারণে আমরা এই ঘর ফিরিয়ে দিয়েছি। আমি পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছি মানুষের কাজ করার জন্য। সেখানে আমিই যদি সরকারি সুবিধে নিই আর আমাদের থেকেও আর্থিক দিক থেকে দুর্বলরা পরিষেবা না পান, তাহলে কেমন হয়?”
এপ্রসঙ্গে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শিউলি দেবনাথ বলেন, “আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যার কোনও তুলনা হয় না। যখন ডাকি ওনাকে তখনই পাই। নিজেদের ভাল ঘর নেই তবুও নিজে সরকারি ঘর নেননি। এই যুগে এমন পঞ্চায়েত সদস্য পাওয়া ভাগ্যের। নিজের পয়সা খরচ করে উনি মানুষের জন্য কাজ করেন।” আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রকাশ চিক বড়াইক বলেন, “মনিকা পণ্ডিত আমাদের দলের সম্পদ। ওনার সততা ও সংগঠনের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রশ্নের অতীত। উনি বিবেকানন্দ ১ অঞ্চল মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী। উনি আমাদেরও প্রেরনা।” এভাবে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও মানুষের জন্য মনিকার এই কাজের উদ্যোগকে প্রশংসা করেন তাঁর স্বামী স্বপন পণ্ডিতও। “আমরা গরিব হতে পারি কিন্তু মানুষের কাজ করতে ভালবাসি। সেই কারণে মনিকা যখন মানুষের জন্য কাজ করে তখন আমাদের ভাল লাগে। এমন অনেক সময় হয়, শুধু সিদ্ধ ভাত ছাড়া আমাদের অন্য কিছু খাওয়া জোটে না। কিন্তু তবুও মনের শান্তি রয়েছে আমাদের। ও এভাবেই মানুষের কাজ করুক এটাই চাই আমরা। আমাদের টাকা পয়সার খুব বেশি দরকার নেই”, বক্তব্য স্বপনবাবুর।
