তড়িঘড়িই মিলল সুফল। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’দিনের ধর্নার পরই নড়েচড়ে বসল কেন্দ্র। জোড়া বরাদ্দ জুটল রাজ্য সরকারের কপালে। মিড ডে মিলের খাতে ৬৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের পাশাপাশি সমগ্র শিক্ষা মিশনেও রাজ্যের বরাদ্দ পাঠানো কেন্দ্রীয় সরকার। সমগ্র শিক্ষা মিশনের খাতে রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে আরও ৫৭৬ কোটি টাকা। দুই খাতে বরাদ্দ মিলিয়ে মোট ১২১৪ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রাজ্যকে দিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। দু’টি প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এটা গত আর্থিক বছরের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা। কিন্তু তা এল নতুন অর্থবর্ষের প্রথম দিনেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নার পরেই জোড়া বরাদ্দ পাওয়াকে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ বলেই মনে করছে রাজ্য রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। কারণ, রাজ্যের মিড ডে মিল নিয়ে দুর্নীতি এবং বেনিয়মের অভিযোগে তদন্ত করতে গত জানুয়ারি মাসে একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই তদন্তের পর পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে দু’টি ক্ষেত্রে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন নবান্ন। অর্থ পাঠালেও যে বাংলার মিড ডে মিল পরিষেবা নিয়ে কেন্দ্রীয় নজরদারি চলবে, তা ইতিমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ, রাজ্যের মিড ডে মিল নিয়ে অডিট চলবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে গত মার্চ মাসেই। মিড ডে মিল এবং সমগ্র শিক্ষা মিশন নিয়ে বকেয়া বরাদ্দ পাঠালেও, অন্য ক্ষেত্রে বকেয়ার টাকা কবে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে কোনও সংবাদ নবান্নকে জানায়নি কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। ইতিমধ্যে দিল্লী গিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের দাবি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তা সত্ত্বেও ওই খাতে বরাদ্দ দেয়নি কেন্দ্র, এমনটাই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। পাশাপাশি তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে এই সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার পরেও বরাদ্দ আটকে রাখা হয়েছে। এমনকি তৃণমূল সাংসদরা সম্মিলিত ভাবে দিল্লিতে বিষয়টি নিয়ে সরব হলেও বকেয়া পাওনা নিয়ে চুপ রয়েছে কেন্দ্র। ১০০ দিনের কাজে রাজ্যের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। আবার আবাস যোজনায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকাও বকেয়া রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১০৬টি প্রকল্পে রাজ্যের মোট বকেয়ার পরিমাণ এক লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও এই সুর শোনা যায়। সেই বিপুল পরিমাণ বকেয়ার বিরুদ্ধেই বুধ এবং বৃহস্পতিবার রেড রোডে ধর্না দিয়েছেন মমতা। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, এরপর রাজধানী দিল্লীতে গিয়েও ধর্না দেবেন। আর সেই হুঁশিয়ারির পর অল্প হলেও, বকেয়া বরাদ্দের একাংশ পেল বাংলা। বিকাশ ভবন জানিয়েছে, এই পাওনা গত অর্থবর্ষের।