সম্প্রতি লন্ডনে ব্রিটিশ সাংসদ-বিধায়কদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছিলেন, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হয় ভারতীয় সংসদে। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেছিলেন, ‘গণতন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকেই ছুড়ে ফেলে দিয়েছে আরএসএস। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষমতা পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে তারা। দেশের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের প্রকৃতিই পালটে দিয়েছে।’ এরপরই ওয়ানাডের কংগ্রেস সাংসদের সদস্যপদ খারিজের দাবি জানিয়েছিল বিজেপি। লোকসভার স্পিকারকে এ নিয়ে চিঠিও দিয়েছে তারা। যদিও স্পিকার এই ব্যাপারে অগ্রসর হওয়ার কোনও আভাস দেননি। কিন্তু সুরাতের আদালতের রায়কে হাতিয়ার করে মোদী সরকার রাহুলের সদস্যপদ খারিজে অগ্রসর হতে পারে বলে আশঙ্কা কংগ্রেসের।
এরই মধ্যে হাত শিবিরকে আরও ভাবিয়ে তুলেছে সুরাতের আদালতের রায় নিয়ে বিজেপির নীরবতা এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্পিকার ওম বিড়লার ঘরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ প্রথমসারির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রবীণ বিজেপি নেতাদের বৈঠক। আসলে এটা সব পক্ষই মানছে, যে রাহুল উচ্চ আদালতে না যাওয়া পর্যন্ত তাঁর সাংসদ পদের ভবিষ্যৎ স্পিকারের হাতেই। সুরাতের আদালত রাহুলের সাজার উপর তিরিশ দিনের স্থগিতাদেশ দিয়েছে। তিনি যে দোষী তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। এই ব্যাপারে উচ্চ আদালতে তাঁর রেহাই পাওয়ার উপায় নেই। যত বিতর্ক সাজার মেয়াদ নিয়ে।
এই পরিস্থিতিতে স্পিকার কি রাহুলকে সংসদে প্রবেশের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারেন? কংগ্রেস নেতাদের ধারণা, আদানি ইস্যু চাপা দিতে বিজেপি সেই পথেই এগতে পারে। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্পিকারের ঘরের বৈঠকে সুরাতের আদালতের রায় নিয়েও কথা হলেছে। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘবির কথায়, ব্যক্তিগত মানহানির মামলায় দু’ বছর সাজা দেওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। কারণ, যাঁদের নাম করে রাহুল গান্ধী মোদী পদবী নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন তাঁরা কেউ মামলা করেননি। এই ধরনের মামলায় সতর্ক করে দিয়েই মামলার নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়। দু-বছরের জেলের সাজা তাই সন্দেহজনক রায়।
এই পরিস্থিতিতে স্পিকার কি করতে পারেন? কংগ্রেসের আশঙ্কা, রাহুল গান্ধী উচ্চ আদালতে যাওয়ার আগেই স্পিকার কংগ্রেস সাংসদের সদস্যপদ খারিজের প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে পারেন। রাহুল গান্ধী লোকসভার সদস্য হওয়ায় সুরাতের আদালতের রায়ের কপি বৃহস্পতিবারই স্পিকারের অফিসে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তথা অ্যাক্টিভিস্ট বিনীত জিন্দল লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখে অবিলম্বে রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ খারিজের দাবি জানিয়েছেন। স্পিকার সেই মতো প্রক্রিয়া চালু করে দিলে রাহুল চলতি অধিবেশনে সংসদেই আসতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আদানি ইস্যুতে তাঁর সংসদে মুখ খোলা এবং লন্ডনে গণতন্ত্র নিয়ে বলা ভাষণের ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ মিলবে না।