আসল নাম লম্বোদর মাহাত হলেও এলাকাবাসীর কাছে তিনি সুপরিচিত ‘লম্বু মিস্ত্রি’ নামে। সকলেই একবাক্যে স্বীকার করে নেন, তাঁর হাতে জাদু আছে। মোটরবাইক মেরামতিতে তিনি সাক্ষাৎ বিশ্বকর্মা! গত তিন দশক ধরেই পুরুলিয়া শহরের মিষ্টিমহল এলাকার একটি গ্যারেজে মোটরবাইক, স্কুটি সারিয়ে চলেছেন। তবে অনেকেই এটা জানেন না, এই লম্বু মিস্ত্রি একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও! হ্যাঁ, বরাবাজারে তৃণমূল পরিচালিত ভাগাবাঁধ গ্রামে ভোটে জিতে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হয়েছেন তিনি। গত পাঁচ বছর ধরেই সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তবে বাইক সারানোর গ্যারেজে এসে তাঁর কাজ করা বন্ধ হয়নি একটি দিনের জন্যও। উপপ্রধান হয়েও ছাড়েননি নিজের পেশা।
অনেকেই বলছেন, দুর্নীতির থেকে শত হস্ত দূরে থাকা লম্বু মিস্ত্রির জীবনযাত্রা যেন একেবারে বেনজির। বাড়ি-গাড়ি দূরের কথা, ঝাঁ চকচকে পোশাকও নেই তাঁর। গ্যারেজের কালিমাখা জামা গায়েই কাটিয়ে দেন সারা দিন। দিনের শেষে ফেরেন নিজের মাটির বাড়িতে। লম্বোদর জানান, এলাকাবাসীর জোরাজুরিতেই ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন এবং জিতেছিলেন। তাতে দায়িত্ব খানিক বাড়লেও, জীবন কিছুই বদলায়নি। রোজ সকালে ৯টা পর্যন্ত গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে নানারকম দরকার মিটিয়ে গ্যারেজে চলে আসেন ২০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত কাজ করে বাড়ি ফিরে যান। তবে পঞ্চায়েতে কোনও মিটিং থাকলে যেতে হয়। আবার গ্যারেজে কাজ বাকি থাকলে তাও ‘ওভারটাইম’ করে শেষ করেন।
উপপ্রধান হয়েও কেন এত খাটাখাটনি? লম্বোদরের স্পষ্ট উত্তর, পাঁচ বছরের মেয়াদ ফুরোলে তখন কী হবে? এতদিনের খদ্দেররা তো আর থাকবেন না, গাড়ি সারানোর অভ্যেসও চলে যাবে। তার চেয়ে এই ভাল। এই পাঁচ বছরে আখের গুছিয়ে নেওয়ার প্রশ্নেও অবাকই হন লম্বোদর। জানান, পঞ্চায়েত অফিসের ভাতাটুকু ছাড়া অন্য কোনও টাকা কখনওই পাননি তিনি। তাই আগেও যেভাবে কষ্ট করে দিন চলত এখনও সেভাবেই চলছে। কিছুই বদলায়নি। এলাকাবাসী বলছেন, ‘কোনও উপপ্রধান যে এখনও এভাবে বাইক সারানোর কাজ করেন, তা না জানলে বিশ্বাস করতাম না। সবার কত ঠাঁটবাট, কিন্তু লম্বুদা এভাবেই রয়ে গেলেন। নিজের একটা নতুন বাইকও নেই!’