গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, মহারাষ্ট্রে শিবসেনার ৩৪ বিধায়কের নেতা একনাথ শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দিয়ে সংবিধান ও আইন ভেঙেছিলেন রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁর আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল। রাজ্যপালকে নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের এই পর্যবেক্ষণে গদি হারানো উদ্ধব ঠাকরে শিবির আশাবাদী হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট এরপর একনাথ শিন্ডের জোট সরকারকে বরখাস্ত করার কথা বলবে। তাঁরাই আসল শিবসেনা দাবি করে শিন্ডে তাঁর অনুগামীদের নিয়ে বিজেপির সমর্থনে গত বছর জুনে সরকার গড়েন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী পর্যবেক্ষণ হতাশ করল উদ্ধব শিবিরকেও।
তাঁর সরকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে জোরালো সওয়াল করেন উদ্ধবের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যপালের ভুল বা রাজনৈতির অভিষন্ধিমূলক সিদ্ধান্তের খেসারত একটি রাজনৈতিক দল ভোগ করতে পারে না, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তাই পূর্বাবস্থায় ফেরানো হোক মহারাষ্ট্রের সরকারকে। প্রধান বিচারপতি বৃহস্পতিবারের শুনানিতে উদ্ধব শিবিরের আর্জিকেও কড়া প্রশ্নের মুখে ফেলেন। তিনি বলেন, উদ্ধব ঠাকরে পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি যদি বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতেন তাহলে তাঁর আর্জি বিবেচনা করা যেত। কিন্তু তিনি হেরে যাবেন বুঝেই পদত্যাগ করেন, এটা ধরে নেওয়া অমূলক নয়।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, রাজ্যপালের উচিত ছিল নতুন সরকার তৈরির আগে সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে কথা বলা। উদ্ধব ঠাকরে পদত্যাগ করা মাত্র তিনি নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠান সেরে ফেলেন। প্রধান বিচারপতির কথায়, কিন্তু একথাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে রাজ্যপাল উদ্ধব ঠাকরেকে বরখাস্ত করেননি। তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে পদত্যাগ করতেও বলেননি। তৎকালীন শিবসেনা নেতা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। তাহলে মহারাষ্ট্রে সরকার নিয়ে আইনি ও সাংবিধানিক বিবাদের নিষ্পত্তি কীভাবে সম্ভব? কী বলতে পারে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ?
আইনজ্ঞরা বলছেন, অতীতে একই ধরনের মামলায় আগের সরকারকে ফেরানোর পক্ষে সরাসরি রায় দেয়নি আদালত। তারা আগের সিদ্ধান্ত সঠিক কী ভুল, সেই অভিমত দিয়েছে মাত্র। কারণ, ক্ষমতাসীন সরকারও বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করেছে। ফলে রায়ের ভিত্তিতে কেউ নৈতিক কারণে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে আলাদা কথা। তবে আগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে আদালত রায় দিলে রাজ্যপাল সরকারকে বরখাস্ত করতে পারেন। মহারাষ্ট্র বিতর্ক সেদিকে গড়ালেও সরাসরি উদ্ধবের ক্ষমতায় ফেরার সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের রায়ে তাঁর দলও বদলে গিয়েছে। মূল শিবসেনা এখন শিন্ডে শিবিরের অধীনে। ফলে সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে মহারাষ্ট্রে যে আর নতুন করে পালাবদল সম্ভব নয়, সে কথা বলাই বাহুল্য।