আজ, মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায় ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে দলীয় কর্মসূচীতে যোগ দেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেখান থেকে বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কড়া ভাষায় একহাত নেন তিনি। বলেন, “ভারতের রাজনীতিতে বিজেপিকে ‘শহীদ’ করতে হবে। এই দল যাতে ভারতীয় রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।” ওই কর্মসূচিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ‘অমাবস্যার চাঁদ’ বলেও কটাক্ষ করেন চন্দ্রিমা। উল্লেখ্য, বিগত ২০০৭ সালের ১৪ই মার্চ এই ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছেই পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ১৪ জন সদস্যের। সেই দিনটি বরাবরই ‘শহীদ দিবস’ হিসাবে পালন করে আসছেন শুভেন্দু। তিনি বিজেপিতে যাওয়ার পর নন্দীগ্রামে একই দিনে পৃথক কর্মসূচী পালন করে তৃণমূলও। ওই ব্রিজের কাছে একটি শহীদ বেদী রয়েছে। শুভেন্দুর তৈরির শহীদ বেদী রয়েছে গোকুলনগরে। মঙ্গলবার সকালে সেখানে কর্মসূচীতে যোগ দিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘একেবারে গ্যারেজ’ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন শুভেন্দু। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় তৃণমূলের অন্য নেতাদেরও। শুভেন্দুর সভার পর সেখান থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে তৃণমূল আয়োজিত কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছিলেন চন্দ্রিমা, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমেন মহাপাত্র, অখিল গিরি-সহ তৃণমূলের অন্য নেতা-নেত্রীরা।
এদিন এই কর্মসূচীতে যোগ দিয়ে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘আমরা রক্তাক্ত খেলা খেলব না। কিন্তু ওই রাজনৈতিক দলকে ভারতের রাজনীতিতে শহীদ করতে হবে। এখানে এক জন ছিলেন। সেই ছেলেটির নাম যেন কি? শুভ ইন্দু (চাঁদ) নয়, উনি আসলে অমাবস্যার চাঁদ। ওঁর নামে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। এক জন ভুঁইফোড় বিজেপি নেতা। যাঁদের হাত শহীদদের রক্তে রাঙা তাঁদের হাত ধরেই গোকুলনগরে শহীদ দিবস করতে গিয়েছেন।’’ দলনেত্রী মমতা এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেককে ‘গ্যারেজ’ করার মন্তব্য নিয়েও শুভেন্দুকে একহাত নেন চন্দ্রিমা। তিনি বলেন, ‘‘উনি আবার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন ১৪ মার্চ ২০২৪ এর আগে পিসি-ভাইপোকে গ্যারেজ করে দেবেন। উনি কি জ্যোতিষী না কি রে বাবু? গ্যারেজ করে দেবে নাকি নিজেই গ্যারেজ হবে! ওনাকেই গ্যারেজ করে দিতে হবে এটাই ওনার কপালে লেখা রয়েছে। এত অহংকার ভালো নয়, এই অহংকার বাংলার মানুষ চূর্ণ করে দেবে। নন্দীগ্রামের মানুষ চূর্ণ করে দেবে।’’ পাশাপাশি, ‘শহীদ দিবস’ হিসাবে শুভেন্দুর শ্রদ্ধা, তর্পণও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই অভিহিত করেছেন চন্দ্রিমা।
প্রসঙ্গত, গোকুলনগরে ‘শহীদ দিবস’ পালনের পর শহীদ পরিবারের সদস্যদের পা জল দিয়ে ধুইয়ে দিতে দেখা যায় বিরোধী দলনেতাকে। তা নিয়েও শুভেন্দুকে কটাক্ষে বিঁধেছেন চন্দ্রিমা। কর্মসূচীর পর সাংবাদিক সম্মেলন করে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘উনি সব জানেন। কার ফোনে কী তথ্য রয়েছে তার সবটাই জানেন শুভেন্দু। শহীদ পরিবার নাকি শুভেন্দুর সঙ্গে আছে! এ সব নাটক করে কোনও লাভ নেই। এত বছর ধরে শহীদ দিবস হয়েছে কিন্তু এ বার নাটক করে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পা ধোয়াচ্ছেন। দেখতে হবে তাঁদের জোর করে ভয় দেখিয়ে, না কি পা ধরে টানতে টানতে ধোয়ার জন্য নিয়ে গিয়েছেন। উনি নাটক করতে ভালোবাসেন। আমরা বিধানসভাতেও দেখি উনি ওয়াকআউট করেন, হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে যান। তালি বাজান। এসব নাটক আমরা প্রায়ই দেখি।’’ অন্যদিকে, শুভেন্দুকে মিরজাফর বলে আক্রমণ করেন অভিনেত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। “অনেক মিরজাফরের মুখোশ খুলে গিয়েছে। তৃণমূল এখন দুধ দিয়ে কাল সাপ পোষা বন্ধ করে দিয়েছে। মুসলিম পরিবারে কেউ জন্মালে যেমন তার নাম মিরজাফর রাখা হয় না, তেমনই হিন্দু পরিবারে পুত্রসন্তান জন্মালে শুভেন্দু রাখা হয় না। নন্দীগ্রামের মানুষ জানেন উনি লোডশেডিং বিধায়ক। এত পাপ করেছেন সেই পাপ ধোয়া যাবে না’’, বিরোধী দলনেতা নিশানা করে বক্তব্য তৃণমূল নেত্রী।