বাংলায় বিজেপি যখন তৃণমূলের বিকল্প হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তখন জোড়াফুলকে ধাক্কা দিতে গিয়ে বাম-কংগ্রেসকে প্রকাশ্যেই তোল্লাই দেওয়ার অর্থ আত্মহনের পথে এগিয়ে যাওয়া। আর তাই এবার বাংলায় শুভেন্দু অধিকারীর লাইনকে খারিজ করে দিল কেন্দ্রীয় বিজেপির নেতৃত্ব। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, কোনও মতেই বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোটকে নিয়ে বিন্দুমাত্র মাতামাতি করা যাবে না।
জানা গিয়েছে, সাগরদিঘির উপনির্বাচনে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করার স্টাইলে বাম-কংগ্রেস জোটকে মদত দেওয়ার ঘটনায় ভয়ানক চটেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। কারণ, ইতিমধ্যে সাগরদিঘিতে পদ্ম চিহ্নে ভোট প্রাপ্তির সমীকরণ ও দলের তৃতীয় হওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে বিস্তারিত রিপোর্ট দিল্লীতে পাঠিয়েছেন রাজ্যের দুই শীর্ষ বিজেপি নেতা। বিষয়টি নিয়ে দিন দুই আগে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বি এল সন্তোষ ও জে পি নাড্ডার মধ্যে বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছে।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, রাজনৈতিক মতাদর্শগতভাবে বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের বিস্তর দূরত্ব ও পার্থক্য রয়েছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নীতিগত বিরোধ প্রকাশ্যেই চলেছে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির। সেখানে বাংলায় তৃণমূলের বিকল্প হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন শুভেন্দু অধিকারীদের ব্যক্তিগত ভাবনায় জোড়াফুলকে ধাক্কা দিতে গিয়ে বাম-কংগ্রেসকে প্রকাশ্যেই তোল্লাই দেওয়ার অর্থ তো আত্মহনের পথে এগিয়ে যাওয়া।
দিল্লীর বিজেপি নেতারা স্বীকার করেছেন, বিজেপির নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক এখনও বাংলায় ৪-৫ শতাংশের বেশি নয়। বাম-কংগ্রেসের ভোট নিজেদের দিকে টেনে এনেই একুশের বিধানসভা ভোটে পদ্মশিবির বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু শুভেন্দুদের ব্যক্তিগত লাইনের জেরে যদি সাগরদিঘি মডেলে বাম-কংগ্রেসের ভোট বিজেপি থেকে সরে যায় তবে পদ্ম শিবিরেরই ক্ষতি। কারণ, এমন হলে জনমানসে ধারণা তৈরি হবে, যে আগামী দিনে বাম-কংগ্রেসই তৃণমূলের বিকল্প হিসাবে জিততে পারে। বিজেপি নয়।
দিল্লীর এক বিজেপি নেতা রবিবারই স্বীকার করেছেন, বাংলায় বিরোধী দলনেতার লাইন মেনে বাম-কংগ্রেসকে যদি অক্সিজেন দেওয়া হয় তবে খুব দ্রুত বিজেপিকে আইসিইউ-তে চলে যেতে হবে। আর সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূল থেকে সরে গিয়েছে বলে শুভেন্দুপন্থীরা যে প্রচার করছে তা সঠিক নয়। কারণ, নির্বাচনী বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। উলটে সাগরদিঘিতে হিন্দু ভোটই বিজেপির কাছ থেকে সরে গিয়েছে। তাই ২০২১ সালে প্রয়াত সুব্রত সাহার সঙ্গে লড়াইয়ে দ্বিতীয় হওয়া বিজেপি এবার উপনির্বাচনে মাত্র ১৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছে।