চলতি বছরেই রাজস্থানে বিধানসভা ভোট। আর তার আগে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি ব্যস্ত নির্বাচনে দলের মুখ্যমন্ত্রী মুখ কে হবেন, সেই প্রশ্নের মীমাংসা করতে। আর সেই কারণে ভোটের আট মাস বাকি থাকলেও বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার চেয়ারে বসতে তুমুল লড়াই শুরু হয়েছে রাজস্থানের গেরুয়া শিবিরে। সেই লক্ষ্যে ধুমধাম করে নিজের জন্মদিন পালনের আয়োজন করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। অন্যদিকে, আজই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের বাড়ি ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপির যুব মোর্চা। দলের রাজ্য সভাপতি আবার এই কর্মসূচিতে দলের সকলকে যোগ দিতে একপ্রকার নির্দেশ জারি করেছেন। ফলে মরুরাজ্যের বিজেপির নেতা কর্মীদের আজ শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা।
এই বিবাদের মুখে দু’দিন আগে দলের এক শীর্ষ নেতা সাফ জানিয়ে দেন, রাজস্থানে বিজেপি বিধানসভা ভোটে লড়াই করবে দলীয় প্রতীক পদ্মফুল চিহ্নকে সামনে রেখে। অর্থাৎ কাউকেই মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরা হবে না। কিন্তু দু’বারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া তা মানতে নারাজ। দলে ক্রমে কোণঠাসা বসুন্ধরা হালে ভেসে উঠেছেন রাজ্য-রাজ্যনীতিতে। একক উদ্যোগে জনসংযোগ যাত্রা শেষ করে এবার তাঁর লক্ষ্য আট মাসের জন্যই বিরোধী দলনেতা হওয়া। যাতে বিজেপি ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে পারেন। আর তিনি মনে করেন, দলকে ফের ক্ষমতাসীন করার দক্ষতা আছে তাঁরই। জনপ্রিয়তায় তাঁর ধারেকাছে নেই কেউ, দাবি তাঁর অনুগামীদের।
গতমাস পর্যন্ত কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে বিরোধী দলনেতা ছিলেন বিজেপির গুলাব চাঁদ কাটারিয়া। দল তাঁকে আসামের রাজ্যপাল করার পর থেকে রাজস্থানে ওই পদটি শূন্য। সেই পদে বসতে বসুন্ধরা ছাড়াও আগ্রহীর তালিকায় আছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সতীশ পুনিয়া, উপ বিরোধী দলনেতা রাজেন্দ্র রাঠোর, আরএসএস ঘনিষ্ঠ শিক্ষামন্ত্রী বাসুদেব দেবনানি প্রমুখ। যদিও রাজস্থান বিজেপি মূলত বসুন্ধরা এবং পুনিয়া শিবিরে আড়াআড়ি বিভক্ত। দুই শিবিরের নেতা-কর্মীদের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ। রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর সাংগঠনিক সব কর্মসূচি থেকেই বসুন্ধরাকে গত চার বছর ধরে দূরে ঠেলে রেখেছিলেন পুনিয়া। এমনকী নানা সময় বলেছেন, নরেন্দ্র মোদীর মতো ব্যতিক্রমী নেতা ছাড়া ৭০ পেরলেই রাজনীতিকদের অবসর নেওয়া উচিত। আসলে সত্তর ছুঁই ছুঁই বসুন্ধরাকে রাজনীতিকে থেকে সরে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি।
জবাব দিতে বসুন্ধরা বেছে নিয়েছেন তাঁর সত্তরতম জন্মদিনটি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জন্ম ৮ মার্চ। এ বছর ওই দিন হোলি থাকায় বসুন্ধরা চারদিন আগে শনিবার তাঁর জন্মদিন পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তা পালন করবেন রাজ্য সভাপতি পুনিয়ার জেলা চারুতেই। সেখানে বিখ্যাত হনুমান মন্দির সালাসার ধাম লাগোয়া ময়দানে পালিত হবে বসুন্ধরার জন্মদিন। রাজস্থানবাসীর অনেকেরই বাসনা থাকে সালাসার ধামে গিয়ে মাথা ঠেকাবেন। বসুন্ধরার অনুগামীরা নিখরচায় সেই সুযোগ করে দিচ্ছেন। এক লাখ লোককে সেদিন খাওয়াবেন তারা। এ জন্য রাজ্যের সব জেলা থেকে গাড়ি বোঝাই করে লোকজনকে তীর্থস্থান পরিদর্শনে নিয়ে আসা হবে। ভুরিভোজের পর বসুন্ধরা লাখো মানুষের সমাবেশে ভাষণ দেবেন।
এইভাবেই জন্মদিনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা গোয়ালিয়র রাজ পরিবারের রাজকন্যা বসুন্ধরা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বার্তা দিতে চান রাজস্থানে মোদীকে ছাড়াও যাঁকে সামনে রেখে দলকে ক্ষমতায় ফেরানো যায় সে হলেন তিনি। বসুন্ধরার এই উদ্যোগ নিয়ে এখনও পর্যন্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব মুখ খোলেননি। পুনিয়ার ঘনিষ্ঠ নেতারা শুধু বলছেন, ৪ মার্চ সালাসার ধামের অনুষ্ঠানের সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। তবে সামান্য হলেও পাল্লা বসুন্ধরার দিকে খাঁনিকটা ঝুঁকে বলেই মনে করছে রাজ্য-রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহল। হালে জয়পুরে দলের রাজ্য দফতরের বাইরে বসুন্ধরার ছবি দেওয়া কাটআউট বসেছে। আর ছেলের বিয়ে দিতে এসে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা একমাত্র বসুন্ধরার সঙ্গে একান্তে বৈঠক করে গিয়েছেন মাস খানেক আগে।