হঠাৎই প্রবল দুর্দশার কবলে পড়েছে মালদহের মালাহার গ্রামের চারটি পরিবার। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ছাই হয়ে গিয়েছে তাদের বাড়িঘর। নগদ টাকাকড়ি, আসবাবপত্র, রান্নাঘর কিছুই রক্ষা পায়নি। নেই পরনের কাপড়টুকুও। সর্বস্ব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচেই অসহায়ভাবে রাত কাটাচ্ছিলেন তাঁরা। খবর পেয়েই তড়িঘড়ি ‘দিদির দূত’ হয়ে ছুটে এসে ওই চার পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন সপার্ষদ তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা মালতিপুরের বিধায়ক আবদুর রহিম বক্সি। ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দেওয়া হল শুকনো খাবার থেকে পরনের কাপড়, শাড়ি-লুঙ্গি এবং শিশুদের পোশাক। গতকাল, সোমবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে মালদহের মালতিপুর বিধানসভার ক্ষেমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মালাহার গ্রামে। প্রাথমিক অনুমান, বাড়ির পাশের খড়ের গাদা থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে। আগুন পরপর চারটি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। দমকল পৌঁছনোর আগেই সর্বস্ব পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। চার পরিবারের অন্তত দশ লক্ষ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিন প্রথমে আগুন লাগে মালাহার গ্রামের হাফিজুদ্দিন ও তাঁর ছেলের বাড়িতে। তারপর পড়শি আবদুর রজ্জক এবং কলিমুদ্দিনের বাড়িতে আগুন ছড়ায়। কিন্তু কিছু করার ছিল না কারও। সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দমকল বাহিনী পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গৃহিণীর সোনা বন্ধক রেখে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেছিলেন কলিমুদ্দিন। তিল তিল করে টাকা ঘরে জমিয়ে রেখেছিলেন গৃহকর্তা। আগুনের লেলিহান শিখা সবকিছুকে ছারখার করে দিয়ে যায়। মঙ্গলবার যথারীতি দলের কর্মসূচী পালন করতে গ্রামে গ্রামে ঘুরছিলেন ‘দিদির দূত’রা। নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূলের বিধায়ক তথা জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বক্সি। মালাহারের এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার খবর পেয়ে দুর্গতের পোড়া বাড়িতে পৌঁছে যান তাঁরা। সঙ্গে ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান থেকে সমিতির সদস্য, দলের অঞ্চল সভাপতি-সহ তৃণমূলের কর্মীরা। তাঁরা দেখেন, ঘরের টিভি, ফ্রিজ, শোকেস, খাট, আলনা, টেবিল, পোশাক, খাদ্যদ্রব্য, সবকিছুই পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। একজনের নগদ ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে দাবি করা হয়েছে। আগুনের শিখা এতটাই প্রবল ছিল যে টাকা উদ্ধার করার সময় পাননি পরিবারের সদস্যরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন কলিমুদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী। এদিকে হাফিজুদ্দিন ও রজ্জাকদের বাড়িও পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। তাঁদেরও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারি সাহায্যের দিকেই চেয়ে রয়েছেন তাঁরা।
এপ্রসঙ্গে চাঁচল অগ্নিনির্বাপক কেন্দ্রের আধিকারিক রতন কুমার সিংহ জানান, বাড়ির আশেপাশের থাকা খড়ের গাদা থেকে আগুনের উৎপত্তি হতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে। মালতিপুরের বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সির নেতৃত্বে ‘দিদির দূত’রা বাড়িতে ঢুকতেই কান্নার রোল শুরু হয়ে যায়। তাঁরা বিধায়কের কাছে সরকারি সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন। বিধায়ক রহিম বক্সির তরফে আর্থিক সাহায্য ও খাদ্যদ্রব্য-সহ পোশাক প্রদান করা হয়েছে। রহিম বক্সি বলেন, “আমি জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে বাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করব। বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে বাড়ি করে দেওয়া যাবে কি না, সেই ব্যাপারেও কথা বলব।” উপস্থিত ছিলেন মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি এটিএম রফিকুল হোসেনও। তিনিও সাহায্যের আশ্বাস দেন। “ব্লক দফতরে আবেদন করলেই তাঁদের সরকারিভাবে সাহায্য করা হবে”, জানান চাঁচল-২ নম্বর ব্লকের বিডিও দিব্যজ্যোতি দাস।