প্রতি দিন মাটির নীচ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে জল তোলার ফল যে আরও মারাত্মক হতে চলেছে ইতিমধ্যেই তা টের পাওয়া যাচ্ছে। একদিকে ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডারে যেমন টান পড়ছে, তেমনই সব মানুষের কাছে পরিশুদ্ধ জল পৌঁছে দেওয়াটাও ক্রমশই কঠিন হয়ে পড়ছে। বারবারই বিভিন্ন দেশের গবেষকরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বের পানযোগ্য জলের ৯৯ ভাগই জোগান দেয় ভূগর্ভে সঞ্চিত থাকা জল। সেই জলের ভাণ্ডারে টান পড়লে, কিংবা তা দূষিত হতে থাকলে, যেমন বাস্তুতন্ত্রের উপরে প্রতিকূল প্রভাব পড়বে, তেমনই ধাক্কা খাবে জনস্বাস্থ্য আন্দোলন।
গবেষকদের এই আশঙ্কা যে আমূলক নয় তার প্রমান সম্প্রতি কেন্দ্রের একটি রিপোর্টে মিলেছে। খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসতে চলেছে দেশের ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ। আগামী ২৮ বছরের মধ্যে সারা দেশেই আরও বৃদ্ধি পাবে ব্যবহারযোগ্য জলের সঙ্কট। সংসদে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। একইসঙ্গে দিল্লী, গুরুগ্রাম, বেঙ্গালুরুর মতো দেশের মোট ১৩টি শহরকে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে যে, ওইসব শহরে ভূগর্ভস্থ জল তোলার হার ১০০ শতাংশেরও বহু গুণ বেশি। যদিও তালিকায় বাংলার কোনও শহরের নাম নেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০২৮ সালের মধ্যে গুরুগ্রাম, ২০৩১ সালের মধ্যে ইন্দোর এবং বিকানির, ২০৩৫-এর মধ্যে অমৃতসর এবং ২০৫০ সালের মধ্যে হায়দরাবাদের জলের একমাত্র উৎস হতে চলেছে ‘সারফেস ওয়াটার সোর্সেস’। অর্থাৎ, পুকুর, নদী, হ্রদ কিংবা এরকমই ভূপৃষ্ঠে থাকা কোনও জলের উৎস। কারণ, দ্রত ফুরিয়ে আসছে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ। এই তালিকায় রয়েছে আজমিরের নামও। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল। প্রশ্ন উঠছে, যথেচ্ছভাবে ভূগর্ভস্থ জল তুলে ফেলার কারণেই কি সেই ভাণ্ডার দ্রুত ফুরিয়ে আসছে?
সম্প্রতি লোকসভায় জলশক্তি মন্ত্রক সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ডের (সিজিডব্লুবি) এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্টের (গ্রাউন্ড ওয়াটার সিচুয়েশনস ইন সিলেক্ট সিটিজ ইন ইন্ডিয়া) সংক্ষিপ্তসার লিখিতভাবে পেশ করেছে। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ভূগর্ভস্থ জল তোলার হার দিল্লীতে ৩৬০ শতাংশ, ফরিদাবাদে ২৬৯ শতাংশ, গুরুগ্রামে ৩০০ শতাংশ, বেঙ্গালুরুতে ১৪১ শতাংশ, অমৃতসরে ৩৬৩ শতাংশ, জলন্ধরে ৪৭২ শতাংশ, লুধিয়ানায় ২৯০ শতাংশ, মোহালিতে ২১২ শতাংশ, পাতিয়ালায় ৩১২ শতাংশ, বিকানিরে ২৩৯ শতাংশ, চেন্নাইয়ে ১০০ শতাংশ, হায়দ্রাবাদে ২৯৪ শতাংশ এবং গাজিয়াবাদে ২৪৫ শতাংশ।
এই ১৩টি শহরের বাইরে রয়েছে আগ্রা, যেখানে ভূগর্ভস্থ জল তোলার হার ৯৩ শতাংশ। ভূগর্ভস্থ জল তোলার হার বার্ষিক অনুমোদনের ৭০ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে, দেশের এমন আটটি শহরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলি হল গান্ধীনগর (৮৮ শতাংশ), আম্বালা (৭২ শতাংশ), যমুনানগর (৭৪ শতাংশ), ইন্দোর (৮৪ শতাংশ), রতলাম (৭৭ শতাংশ), জয়সলমীর (৭৪ শতাংশ), জয়পুর (৯০ শতাংশ) এবং যোধপুর (৮৭ শতাংশ)। এই হার ৭০ শতাংশের কম, এমন শহর রয়েছে মাত্র দু’টি। আজমির (৩৩ শতাংশ) এবং ভেলোর (৫৫ শতাংশ)।