কলকাতার আবহমান ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে ট্রাম। বিগত ১৮৭৩ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি কলকাতায় প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু হয়েছিল। শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত ৩.৯ কিলোমিটার পথ চলেছিল সেই ট্রাম। বছরের হিসাবে আগামী শুক্রবার সেই দিনের সার্ধশতবর্ষ। সেই আবহে মঙ্গলবার বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের শেষবেলায় কলকাতায় ট্রাম রেখে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিমান বিধানসভায় জানান, কলকাতার ট্রাম এই বছর দেড়শো বছরে পা দেবে। সেই ট্রাম যেন কলকাতা থেকে উঠে না যায় সে দিকে সরকারকে নজর দিতে অনুরোধ করেন তিনি। “ট্রামের সঙ্গে বাংলা তথা কলকাতার মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে। তাই সরকারের উচিত, সে দিকে নজর দিয়ে কলকাতায় ট্রাম পরিষেবা চালু রাখা”, জানিয়েছেন বিমানবাবু।
এরপর বিধানসভায় স্পিকারের এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, তিনি সরকারে কিছু দিন পরিবহণ মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তাই জানেন, সরকারের ট্রাম তুলে দেওয়ার কোনও অভিপ্রায় নেই। ফিরহাদের কথায়, “সরকার কলকাতা শহরে ট্রাম চালানোর পক্ষপাতী। কিন্তু কিছু জায়গার ট্রাম তুলে দিতে হয়েছে যানজটের কারণে। আবার কিছু জায়গার ট্রাম তুলে দিতে হয়েছে মেট্রো রেলের কাজের জন্য। তবে ট্রাম তুলে দেওয়ার কথা সরকার কখনওই ভাবেনি।” বিধানসভায় ফিরহাদ আশ্বাস দিয়েছেন, কলকাতা শহর থেকে কোনও ভাবেই ট্রাম তোলা হবে না। পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা যায়, এক সময় কলকাতা শহরে ২৫টি রুটে ট্রাম চলাচল করত। বর্তমানে মাত্র দু’টি রুটে ট্রাম চলাচল করছে। এখন কেবলমাত্র ধর্মতলা-গড়িয়াহাট এবং বালিগঞ্জ-টালিগঞ্জ রুটে ট্রাম চলছে। তবে এই দু’টি রুটের সঙ্গে আরও নতুন দুটি রুটকে যুক্ত করা হতে পারে বলে জানাচ্ছে পরিবহণ দফতরের একটি সূত্র। সে ক্ষেত্রে ধর্মতলা-খিদিরপুর এবং ধর্মতলা-শ্যামবাজারের মধ্যে আবার ট্রাম চলাচল শুরু হতে পারে। আবার ধর্মতলা-খিদিরপুর রুটটি একটি হেরিটেজ রুট বলেই পরিচিত। কারণ এই রুট দিয়েই ১৯০২ সালের ২৭ মার্চ কলকাতায় প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম পরিষেবার সূচনা হয়। এই রুটটিতেও ট্রাম চালানোর পক্ষপাতী পরিবহণ দফতর। সার্ধশতবর্ষে দাঁড়িয়ে কলকাতায় আগত পর্যটকদের জন্য বিশেষ ট্রাম পরিষেবার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ধর্মতলা থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য ট্রাম চালানো হবে। এই ট্রাম চলাচলের জন্য ভিক্টোরিয়ার সামনে টুরিস্ট প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ করছে রাজ্য সরকার।