বারবারই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্যসাথীতে কোনও রকম কারচুপি করলে বা সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হলে বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তাঁর সরকার। যেমন কথা তেমন কাজ। এবার বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে কোনও দুর্নীতি হচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখতে রাজ্য ও জেলা স্তরে নজরদারি টিম গঠন করল নবান্ন। একই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলি কোন ক্ষেত্রে কত টাকা পাবে সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে নিয়ত অভিযোগ আসছিল যে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে থাকা বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগী ভর্তি করা নিয়ে ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে বেনিয়মের ঘটনা ঘটছে। রোগী ভর্তি না করেই রাজ্যকে বিল পাঠানোর ঘটনা যেমন ঘটছে তেমনি এক চিকিৎসা করে অন্য চিকিৎসার বিল পাঠানোর ঘটনাও ঘটছে। আর তার জেরেই এবার রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলায় জেলায় স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় কে কোথায় কোন ধরনের চিকিৎসা পাচ্ছেন তা নিয়ে কড়া নজরদারি চালানো হবে। তার জন্য জেলায় জেলায় এর জন্য টিম গঠনের সিদ্ধান্তও নিয়েছে রাজ্য সরকার।
জেলাস্তরের টিমগুলির ওপর নজরদারি করার জন্য থাকছে রাজ্যস্তরের টিমও। মূলত নজরদারির আওতায় থাকছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিই। আর সেই কারণেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলি যে বিল রাজ্য সরকারকে পাঠিয়েছে সেই বিল অডিটের পরই হাসপাতালের বকেয়া টাকা মেটানো হবে। কোনও হাসপাতাল কারচুপি করে টাকা নিয়ে থাকলে সেই টাকা ফেরাতে হবে। একাধিকবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে, একটি বিশেষ নির্দেশিকা দিয়ে এমন কথাই জানিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্যদফতর।
স্বাস্থ্য দফতর স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে নতুন যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে তাতে কার্যত বেসরকারি হাসপাতালগুলি কোন কোন ক্ষেত্রে কত টাকা পাওয়া যাবে তা স্পষ্ট বলা হয়েছে। সেখানেই বলে দেওয়া হয়েছে, রোগীর অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে যদি দেখা যায় অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়, তাহলে প্যাকেজের ৩৫ শতাংশ টাকা দেবে সরকার। অস্ত্রোপচার আংশিক হলে মিলবে ৫০ শতাংশ টাকা। অস্ত্রোপচার ব্যর্থ হলে মিলবে ইমপ্ল্যান্টের খরচ এবং মোট প্যাকেজের মাত্র ৩০ শতাংশ। কিডনি ও গলব্লাডারের পাথর পুরোপুরি না বের হলে পাওয়া যাবে ৬০ শতাংশ টাকা।
অস্ত্রোপচারের আগেই রোগী মারা গেলে মাত্র ২৫ শতাংশ টাকা পাবে হাসপাতাল। অস্ত্রোপচার চলাকালীন রোগীর মৃত্যু হলে মিলবে অর্ধেক টাকা। অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোগী মারা গেলে ৭০ শতাংশ টাকা পাবে হাসপাতাল। হাসপাতাল থেকে ছুটি পাবার আগে রোগী মারা গেলে মিলবে ৮৫ শতাংশ টাকা। অস্ত্রোপচার দরকার নেই, এরকম রোগীর ক্ষেত্রে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হলে মিলবে মাত্র ১৫ শতাংশ টাকা। পরীক্ষা না করে, চিকিৎসা শুরুর আগেই রোগীকে রেফার করে দিলে সেই হাসপাতলকে কোনও টাকাই দেওয়া হবে না। চিকিৎসা পুরোপুরি শেষ না করে রোগীকে রেফার বা ট্রান্সফার করলে মিলবে অর্ধেক টাকা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অস্ত্রোপচার না করে রেফার বা ট্রান্সফার করলে মিলবে ২৫ শতাংশ টাকা।