আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ৭১ বছর আগে আজকের দিনেই নিজেদের ভাষার জন্য রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন সালাম-বরকত-রফিক-জব্বাররা। দিয়েছিলেন আত্মবলিদান। সেই ইতিহাস লেখা রয়েছে স্বর্ণাক্ষরে। ভাষা দিবসের প্রসঙ্গ উঠতেই মনে পড়ে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি!/ ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারী/ আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” গানটির কথা। সে সুর ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে ভাষা সংগ্রামের সঙ্গে। আজ জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে এই কবিতা ভাষা আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠল। কীভাবে প্রভাতফেরির একমাত্র গান হয়ে উঠল সেই কবিতা, কীভাবে তা বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণা হয়ে উঠল, সে কথা জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৯৪৮ সালে। ওই বছর থেকেই ধীরে ধীরে প্রবলতর হয়ে উঠতে শুরু করেছিল ভাষা আন্দোলন।
উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের শুরু থেকেই পূর্ববঙ্গে আরও বেড়েছিল ভাষা আন্দোলনের প্রভাব। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে তখন আপামর জনসাধারণ। একুশে ফেব্রুয়ারি গুলি চলে সেই আন্দোলনে। পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর, জব্বর সহ ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেক ছাত্র শহীদ হন। মাতৃভাষা বাংলার অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দেন বাংলার দামাল ছেলেরা। তারপরই লেখা হয়েছিল একুশের এই গান। গানটির মধ্য দিয়ে ছাত্রদের উপর পুলিশের নির্বিচারে গুলি চালানোর তীব্র প্রতিবাদ করা হয়। এতে ফুটে ওঠে ভাষা আন্দোলনের শহীদের মহান আত্মত্যাগের কথা। গানটি লিখেছিলেন আব্দুল গফফর চৌধুরী। একুশের স্মৃতিচারণায় তিনি বলেন, “একুশের গানটি আকস্মিকভাবে লেখা। একজন ভাষা শহীদের লাশ দেখার পরে আমার মনে যে অনুভূতিটা এসেছিল সেটাই আমি কবিতার আকারে লিখি। সেই কবিতাটি গান হয়।”
পাশাপাশি, এপ্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, “এই গানটি লেখার পিছনে আব্দুল গফফর চৌধুরীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কাজ করেছে। কিন্ত, কখনও কখনও তাৎক্ষণিকতা চিরায়ত হয়ে ওঠে। এই গান তারই প্রমাণ।” আন্দোলনের প্রথম প্রকাশিত লিফলেটে একুশের গান শিরোনামে গানটি প্রকাশিত হয়। যদিও তখন গীতিকারের নাম ছাপা হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সংকলনে গীতিকারের নাম সহ প্রকাশিত হয় গানটি। যদিও তৎকালীন সরকার গানটি নিষিদ্ধ করে। তবে তারপরেও এই গানের ব্যাপক জনপ্রিয়তাকে ঠেকানো যায়নি। “এই গানটির জনপ্রিয়তা শুধু তার কথার জন্য নয়, সুরের জন্যও হয়েছে। প্রথমদিকে শ্রেষ্ঠ সুরকার আব্দুল লতিফও এই গানের সুর দিয়েছিলেন। সেটিও জনপ্রিয় হয়েছিল”, জানিয়েছেন আবদুল গফফর চৌধুরী।