মোদী-জমানায় ক্রমশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে দেশের অর্থনীতি। নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়েছেন সাধারণ মানুষ। বর্তমানে ভারতের আর্থিক অবস্থা এমনই যে, ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে মন্দা। এমনই বলছে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বিগত এক বছর যাবৎ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দাবি করে গিয়েছে বিশ্বে আর্থিক সঙ্কট তীব্র হলেও ভারতে, তার প্রভাব পড়বে না। সঙ্গে এও দাবি করা হত যে, বিশ্বের দ্রুততম আর্থিক বৃদ্ধির দেশ হিসেবে উঠে আসছে ভারত। হঠাৎ করেই নিজেদের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলত বিপাকে মোদী সরকার। সদ্য প্রকাশিত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বুলেটিনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দা ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। শিয়রে মন্দা। সেই মন্দা থেকে আর পরিত্রাণের উপায় নেই ভারতের। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নাকি হাত-পা বাঁধা। মূল্যবৃদ্ধির আঁচে আমজনতা পুড়লেও, দাবি করা হয়েছে, আর্থিক বৃদ্ধিহার অর্থাৎ জিডিপি ৭ শতাংশের বেশি হবে। বলা হত, মূল্যবৃদ্ধির হারও নাকি ৫ শতাংশের নীচে নেমে আসবে।
কিন্তু দেখা গিয়েছে, ২০২৩ সালের বাজেট পর থেকেই একের পর এক ধাক্কায় বিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি। মূল্যবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ ছুঁই ছুঁই। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বক্তব্যে আত্মবিশ্বাস নেই। উল্টে তারাই বলছেন, বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দা এমন আকার ধারণ করেছে যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই। মানুষের সুরাহার কোনও পদক্ষেপও এই মুহূর্তে করতে পারবেন না তারা।।রেপো রেট আপাতত কমছে না। বরং রেপো রেট বাড়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার সম্ভাবনাই জোরালো। এতে বোঝা চাপবে আম জনতার কাঁধেই। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার নামে ২০২২ সালের মে মাস থেকে লাগাতার রেপো রেট বাড়ানো হয়েছিল। এতে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ি, বাড়ি, ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হারও বেড়েছে। ইএমআই বৃদ্ধি পেয়েছে বিপুল মাত্রায়। গত নভেম্বরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বীকার করেছিল, রেপো রেট বাড়িয়ে লাভ হয়নি। মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা কমে আসে। মনে করা হয়েছিল, রেপো রেট কমিয়ে হয়ত এবার মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হবে। উল্টে চলতি মাসেও ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট বাড়ানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বুলেটিনে স্পষ্ট জানিয়ে দিল, মন্দা আসবেই। দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে ক্রমশই ডুবছে অনিশ্চয়তায়। আপাতত তা প্রতিরোধ করার কোনও উপায় নেই বলেই মনে করছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা।