জগদীপ ধনকর বাংলার রাজ্যপাল থাকাকালীন বারংবার নবান্নের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিল রাজভবন। রাজ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির বদলে সরকারকে নিত্যদিন আক্রমণের পথেই হাঁটতেন তিনি। তবে গত নভেম্বরে বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে শপথ নিয়ে রাজভবনে আসা ইস্তক রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্কেরই ইঙ্গিত দিয়েছেন সিভি আনন্দ বোস। কিন্তু সম্প্রতি দিল্লী থেকে একাধিক সূত্রে যা খবর আসছে, তাতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আপাত সৌজন্যের আড়ালে কি অন্যরকম বড়সড় তৎপরতা চলছে রাজভবনে?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে রাজ্যপালের উপদেষ্টা বা পরামর্শদাতা হিসাবে এমন কয়েকজনকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, যা কার্যত সমান্তরাল প্রশাসনের চেহারা নিচ্ছে। জগদীপ ধনকর যেমন সকাল-সন্ধে টুইট করে সংঘাতে যেতেন, সিভি আনন্দ বোস তা নন। কিন্তু রাজ্য সরকারের সঙ্গে মৌখিক সুসসম্পর্ক রেখেও তিনি সম্ভবত আরও বড় কিছু পদক্ষেপ চালাচ্ছেন, যা চলছে অতি সন্তর্পণে। দিল্লীর সূত্রটি বলছে, কলকাতার রাজভবনে এমন কিছু ব্যক্তিকে পরামর্শদাতা বা এই ধরনের পদে আনা হচ্ছে যা শ্যাডো-অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নামান্তর।
এর মধ্যে নাম আসছে প্রাক্তন সিবিআই কর্তা রাকেশ আস্থানার। তামিলনাড়ুতে জয়ললিতার পতনের পর যে আইএএস কার্যত সবটা সামলাতেন, তাঁকেও আনা হচ্ছে। কেরল থেকে একাধিক বিভাগের একাধিক অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে আনা হচ্ছে। এই গোটা প্রক্রিয়া করছেন রাজ্যপাল স্বয়ং, দিল্লীর অনুমোদনে। এমনকী, রাজভবনের সচিবালয়তেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না করার নির্দেশ আছে। এ বিষয়ে যে নামের তালিকা জানা যাচ্ছে, তা যেন এক সমান্তরাল মন্ত্রিসভা।
প্রশ্ন হল রাজ্যপাল রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে এই ধরনের কোনও পরামর্শদাতা কমিটি বা বোর্ড গঠন করতে পারেন কি না। দিল্লীর সূত্র বলছে, এ নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম নেই। রাজ্যপাল মনে করলে চাইতেই পারেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি ধরে ধরে রাজ্যপাল এমন সব অভিজ্ঞ লোক আনতে চান কেন? এটা কি তিনি নিজে করছেন, না কি দিল্লির নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনার প্রস্তুতি? এই প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর সূত্রটি দিতে পারেনি। তবে যা হচ্ছে তাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অনুমোদন আছে, তাতে সন্দেহ নেই। এই সূত্রের যা ইঙ্গিত, তাতে বাংলার রাজভবনকে কেন্দ্র করে দিল্লীর আগামী দিন বড় পরিকল্পনা আছে।