খানিক বিষাদের আবহ বইপ্রেমীদের মধ্যে। গতকাল, অর্থাৎ রবিবার শেষ হয়েছে ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। বই-পার্বণের শেষ দিনে বই বিক্রি থেকে জনসমাগম, সবেতেই রেকর্ড গড়েছে এবছরের বইমেলা। গত বছর যেখানে ২৩ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল, সেখানে এবছর ৪৬তম বইমেলায় বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকার। বিগত সব বইমেলার রেকর্ড ভেঙে এবারের বইমেলায় আসা লোকসংখ্যাও ২৬ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। পাবলিশার্স এবং বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘৪৬ বছরের যাবতীয় রেকর্ড ম্লান করে দিয়েছে এবছর বইমেলায় আগতদের সংখ্যা। আর বলা হয়, বাংলা বই নাকি বিক্রি হয় না। বই নাকি বিক্রি হয় না। সেই আশঙ্কা যে অমূলক তা বারবার প্রমাণ করে দিয়েছে কলকাতা বইমেলা। বইয়ের বিকল্প কিছুই হয় না। সেটা প্রমাণিত।’’
প্রসঙ্গত, রবিবার রাত সাড়ে আটটায় একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বইমেলার সমাপ্তি হয়। অনুষ্ঠানে ছিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, বিধাননগর পুরসভার মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুশেখর দে, সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য সাহিত্যিক ও বিশিষ্টজনরা। এদিন বইমেলার সমাপ্তি নিয়ে মতামত একটি লাইনেই ব্যক্ত করেন গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুশেখর দে। বলেন, ‘‘আজ বিজয়া দশমী। বইমেলার দিনগুলিতে দৌড়াদৌড়িতে দিবারাত্র ব্যস্ত থাকি। কিন্তু, এই শেষ দিনে এসে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। প্রত্যেককে অনুরোধ, কী কী অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছে জানাবেন। ভাল দিকটাও জানাবেন, ত্রুটি দেখলেও জানাবেন।’’ ত্রিদিববাবু জানিয়েছেন, ১৪ দিন ধরে ছোট-বড় সব স্টল থেকেই প্রচুর বই বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন থেকেই শুধু ১ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। সমাপ্তি অনুষ্ঠান থেকেই বইমেলা প্রাঙ্গন নিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা তুলে ধরেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মন্ত্রী জানান, সোমবার থেকেই শুরু হবে নিকাশি ব্যবস্থা তৈরির কাজ। আন্ডারপাস, স্থায়ী প্যাভিলিয়নও তৈরি হবে।
রবিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে বইমেলা প্রাঙ্গণে বাড়তে থাকে ভিড়। সল্টলেকের করুণাময়ী মেট্রো স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে কার্যত জনজোয়ার দেখা যায়। বইমেলা প্রাঙ্গণেও প্রতিটি ছোট-বড় প্রকাশনার স্টলের বাইরে বইপ্রেমীদের লাইন। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, সবদিক থেকে আসা মানুষ শেষদিনের বইমেলার আনন্দ উপভোগ করতে হাজির হয়েছিলেন। ছোট থেকে বড় সকলের হাতেই বইয়ের প্যাকেট ও মুখে হাসি। মন ভরাতে বই কেনার পর, পেটপুজোর জন্য রকমারি খাবারের স্টলে ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতোই। রাতে আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি অনুষ্ঠানের আগে বিকেলেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান থেকে গিল্ডের তরফে লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী এবং অনুষ্টুপের অধ্যাপক অনিল আচার্যকে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, বিধাননগর পুরসভা, বিধাননগর পুলিশ, দমকল, রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি দফতর-সহ বইমেলার সঙ্গে জড়িতদের বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হয়। সুসজ্জিত ছোট ও বড় স্টল, এবং খোলা জায়গায় ছোট ও বড় স্টল বিভাগে নির্বাচিতদের পুরস্কৃত করা হয়। সবশেষে ঘণ্টা বাজিয়ে বইমেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।।পরবর্তী বইমেলার প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে হবে নভেম্বর মাসে, গিল্ডের তরফে জানানো হয়েছে এমনটাই।