সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন বাংলায়। ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। তৈরি শাসকদল তৃণমূলও। রাজ্যের সাধারণ, গরিব, মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে নানা সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতে আগামী ৯ই ফেব্রুয়ারী বিশেষ কর্মসূচী নিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের ২৯৪ টি বিধানসভার শহর ও গ্রামীণ এলাকায় একযোগে এই পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম বা পিডিএস অনুষ্ঠিত হবে। হাওড়ার পাঁচলা থেকে রাজ্যব্যাপী এই কর্মসূচীর উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। সেই সঙ্গে রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভার এই কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে উপভোক্তাদের হাতে তা তুলে দেবেন শাসক দলের ওই এলাকার বিধায়করা। যে সব বিধানসভায় তৃণমূলের বিধায়ক নেই, সেখানে বিডিও-র উপস্থিতিতে এই দায়িত্ব পালন করবেন দলের পুরপ্রধান ও পঞ্চায়েত প্রধানরা। এপ্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার বিধানসভা কেন্দ্র খড়দহের গ্রামীণ ও শহর এলাকায় দু’টি কর্মসূচী হবে। একই সময়ে কর্মসূচী হওয়ার কারণে আমি গ্রামীণ এলাকায় উপস্থিত থাকব। মুখ্যমন্ত্রীকে তা জানিয়ে দিয়েছি।” বরানগরের বিধায়ক তাপস রায়ও একই কথা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ৮ই ফেব্রুয়ারি রাজ্যপালের ভাষন দিয়ে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরু হলেও, ৯ই ফেব্রুয়ারির বিধানসভায় কোনও অধিবেশন রাখা হয় নি। সরকারিভাবে এর কোনও ব্যাখ্যা না দেওয়া হলেও, বিধানসভা সূত্রের মতে, ৯ই ফেব্রুয়ারি সরকারি এই বিশেষ কর্মসূচীতে যাতে দলের সব বিধায়করা উপস্থিত থাকতে পারেন, তার জন্য ওই দিন বিধানসভায় কোনও অধিবেশন রাখা হয়নি। ২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট শাসক দলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে শাসক দলের পাহাড় প্রমাণ দূর্নীতি, অন্যদিকে, ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে আবাস যোজনার মতো নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্রের টালবাহানায় প্রান্তিক মানুষের মধ্যে অসন্তোষ জমা হয়েছে। এই আশঙ্কাকে মাথায় রেখেই ‘পিডিএস’-এর পরিকল্পনা। এজন্য রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামেন্নয়ন দফতর, কৃষি, স্বাস্থ্য, পশুপালন, ক্ষুদ্র ও কটির শিল্প, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী এবং ক্ষুদ্র সেচের মতো দফতরগুলিকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রকল্প চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ছোট পাকা রাস্তা নির্মাণ, পানীয় জল, বিদ্যুৎ ও সেচের বিষয়ে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে ইঙ্গিত, এপ্রিলের শেষে কিম্বা মে মাসের মাঝামাঝি রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার সম্ভবনা। সেক্ষেত্রে ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে এই কাজ শেষ করে ফেলতে চায় রাজ্য সরকার। আগামী ৯ই ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী হাওড়ার পাঁচলা থেকে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার জন্য পিডিএস -এর মাধ্যমে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য সবুজ সাথীর সাইকেল, বিধবাভাতা, বার্ধক্যভাতার শংসাপত্র, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড সহ নানা সরকারি পরিষেবা বিলির সূচনা করবেন। পিডিএস- এর পর আগামী মার্চে আরও একবার একবার দুয়ারে সরকার করতে চায় রাজ্য। যা ভোটের ময়দানে তৃণমূলের অব্যর্থ অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
