বহু আগেই এ বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার
জলাশয়গুলির মধ্যে পড়ে থাকা কচুরিপানাই যে কর্মসংস্থানে নতুন দিশা দেখাতে পারে, এমনই জানিয়েছিলেন তিনি। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উপর জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহিলাদের স্বনির্ভরতার দিকে লক্ষ্য রেখে একাধিক উদ্যোগ শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। হস্তশিল্পের কাজের মাধ্যমে রাজ্যের কয়েক হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরপথ দেখিয়েছেন। আবর্জনা হিসেবে বিবেচিত হওয়া কচুরিপানা দিয়েও হাতের কাজের জিনিস বানানোর কথা তিনি বলেন। তবে এই ভাবনা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের। এবার সেই পরিকল্পনাই রূপায়িত হল। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এই প্রথম কচুরিপানা থেকে হস্তশিল্প প্রকল্পের উদ্বোধন হল পূর্ব বর্ধমানে। আগামী দিনে প্রতি জেলাতেই এই ধরনের প্রকল্প তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে
খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ।
এপ্রসঙ্গে পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের জন্য ৪৬ লাখ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই খাল-বিল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ও স্থানীয় যুবক রাজু বাগের প্রশিক্ষণে, কুড়িজন মহিলা নিয়েছে কচুরিপানা দিয়ে বিভিন্ন ঘর সাজানোর সামগ্রী তৈরীর প্রশিক্ষণ। বড় কোবলা এলাকায় বাসিন্দা ওই ২০জন মহিলাকে নিয়েই পথ চলা শুরু করছে কচুরিপানা প্রকল্প। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ”পূর্বস্থলী ১ ব্লকে ৪৬ লাখ টাকা খরচ করে প্রকল্প শুরু হলেও পরীক্ষামূলকভাবে অনেক আগেই এই কাজ আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল। অনেকে অনেক কথা বললেও মুখ্যমন্ত্রী কাজের স্বীকৃতি দিয়েছেন।” পুকুর থেকে কচুরিপানা তুলে তা শুকিয়ে তাই দিয়ে ফুলদানি, ফল রাখার ছোট ঝুড়ি, প্লেট রাখার সামগ্রী সহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এমনকী ব্যবহারের ব্যাগ সহ ঘর সাজানোর নানারকম সামগ্রী তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে কচুরিপানা থেকে। শীঘ্রই নামী প্রতিষ্ঠানের শিল্পীদের দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। মন্ত্রী জানান, ”এই শিল্পে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনেকেই উপকৃত হবেন। পুকুর থেকে কচুরিপানা তুলেও আয় করতে পারবেন বহু মানুষ। ২৫ টাকা কেজি দরে শুকনো কচুরিপানা কিনে চলছে এই হস্তশিল্পের কাজ। যে কেউ তা বিক্রি করতে পারেন। এলাকার পুকুরগুলিও পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং তা থেকে মানুষ আয়ও করতে পারবেন।” জেলার মেলাগুলিতে কচুরিপানা দিয়ে তৈরি সামগ্রী বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন মমতা। এছাড়া জেলায় স্থায়ী স্টলও থাকবে। সেখান থেকেও শৌখিন ক্রেতারা সারা বছরই এই সমস্ত সামগ্রী কিনতে পারবেন। রাজ্যের বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলায় মিলবে এই সেসব। সামগ্রীগুলি রফতানি করা হবে বিদেশেও।