আজ, বুধবার চলতি আর্থিক বছরের বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। এবার এই বাজেটকে একহাত নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বললেন, এই বাজেট একেবারেই মধ্যবিত্তের জন্য নয়। আজ বীরভূমের সভা থেকে মমতা জানান, “সব বিক্রি করে দিচ্ছে কেন্দ্র। বেকার জন্য কি একটাও কথা বলেছে? চাকরি যা ছিল, তাও প্রায় উঠিয়ে দিয়েছে। সব বিক্রি করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সেক্টরগুলো বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। ১০০ দিনের কাজের টাকা, আগের বছর কমিয়ে দিয়েছিল। এবার ‘ড্রাস্টিক কাট’ করে দিয়েছে। তার মানে ১০০ দিনের কাজ আর আপনারা ওদের কাছ থেকে পাবেন না। যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের মাইনি পর্যন্ত এখনও দেননি। আমাদের টাকা তোমরা আটকে রাখো কী করে? ইজ ইট নট অ্যা ক্রিমিন্যাল অফেন্স? সংবিধানে বলা আছে, ১০০ দিনের কাজ করলে, সময় মতো টাকা দিতে হবে। এটা কম্পালসারি। এটা অপশন্যাল নয়। এটা সাংবিধানিক। দেয়নি। আর আমরা বাজেট করি, ট্যাক্স বাড়াই না।”
পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও মোদী সরকারকে কড়া কথায় বিঁধেছেন মমতা। বলেছেন, “ওঁরা নাকি অনেক গ্যাসের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। গ্যাস বেলুন জানেন? গ্যাস বেলুনের মতো গ্যাসের দাম কমিয়েছেন। ধরুন, ছিল ৭০ টাকা, এখন ১ হাজার ১১০। ১১২০ টাকা! এই বাজেটে আশার আলো নেই, অন্ধকার রয়েছে। টোটাল অ্যান্টি পুওর বাজেট। ওরা বলছে, সারা ভারতে ৮১ লক্ষ সেলফ হেল্প গ্রুপ করবে। কিন্তু এটা তো রাজ্য করে। আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন সেল্ফ হেল্প গ্রুপ ছিল ১ লক্ষ। এখন ১১ লক্ষ। সেটাকেই যুক্ত করে বলছে। রাজ্য যা করে, তাকেই যুক্ত করে বলছে। তোমার ক্রেডিট কোথায়? কী করেছে আইসিডিএস, আশাকর্মী, কৃষক, বেকারদের জন্য? গরিব ও সাধারণ মানুষের জন্য বাজেট আধ ঘণ্টায় করে দিতাম। নিত্য জিনিসের দাম বাড়ছে, কী করেছো? বাজেটে দরিদ্ররা বঞ্চিত। একাংশ বঞ্চিত হয়েছে। যেভাবে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, কোনও লাভ নেই, টোটালটাই লোকসান।”
মমতা বলেছেন, “আজ পর্যন্ত কোনও কথা রাখতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথমবার বলেছিল, প্রত্যেককে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে, কেউ পেয়েছেন? বলেছিল ২ কোটি লোকের চাকরি দেওয়া হবে, ৪০ শতাংশ চাকরি কমে গিয়েছে। গরিবদের দিকে ফিরে তাকায়নি। আমি এরকম সরকার আগে দেখিনি। কথায় কথায় পুলিশ সুপার, ডিএমদের ডেকে বৈঠক করছেন। বিজেপির চুনোপুটিগুলো মিটিং করছে। তাদের মুখেও বড় বড় কথা। সবাইকে ইনকাম ট্যাক্স ধরাচ্ছে, সবাইকে ইডি ধরাচ্ছে, সিবিআই ধরাচ্ছে আর টিকটিকিও আপনার ঘরে ঢোকে, তাহলে এনআইএ ঢুকে যাচ্ছে। তাদের কাজ কী, দেশের সিকিওরিটি রক্ষা করা। সত্যিকারের চোর ডাকাতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আপত্তি নেই, কিন্তু কাল সারা দেশ জুড়ে রেড হয়েছে। কেন? পকেটমারি করতে হবে? কেন্দ্রীয় ভান্ডারে টাকা নেই। ৮ শতাংশের নামে ৬ শতাংশে নামবে। শুধু বক্তৃতা, চিঠি পাঠানো। কেন বাংলা থেকে টাকা তুলে নিয়ে যায় কেন্দ্র? এখন জিএসটির মাধ্যমে চলে যায়। অথচ আমাদের টাকা আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। আইসিডিএস এ আগে কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ছিল ৯০ শতাংশ, রাজ্য দেবে ১০ শতাংশ। এখন তুলে দেওয়ার জন্য ৬০-৪০ করে দিয়েছে।”
এদিন আশার মেয়েদের টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়েও সুর চড়ান তৃণমূল নেত্রী। বলেন, “ওরাদেড় হাজার টাকা করে পেত, হঠাৎ সব বন্ধ। কিন্তু আমরা টাকা দিই। লক্ষ্মীর ভান্ডারটা কেড়ে নিয়েছে বিজেপি, তাই আমরা এই ভান্ডার দিয়েছি। বাংলায় এখনও বিনা পয়সায় চিকিৎসা হয়, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড রয়েছে। আজ আরও একটা বড় কেলেঙ্কারি করে ফেলেছে কেন্দ্র। ফুড সাবসিডি কমিয়ে দিয়েছে। তার মানে আগামী দিনে গরিব যাতে রেশন না পায়, ওখান থেকেও টাকাটা মেরে দেবে। আমরা বিনা পয়সায় রেশন দিই। আমরা যে রেশন দিই, সেই টাকাও বন্ধ। যে যে রাজ্যে বিজেপি সরকার নেই, তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। দক্ষিণের কিছু রাজ্য রয়েছে, তাদের আয়টা অন্যভাবে হয়। সেটা আমরা করতে পারছি না।” দেউচা-পাঁচামি প্রসঙ্গে মমতার বক্তব্য, “দেউচা-পাঁচামি বিশ্বের বৃহত্তম কয়লা নগরি হবে। বিদ্যুতের দাম কমে যাবে। ১০০ বছর বাংলার বিদ্যুতের কোনও সমস্যা থাকবে না। বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে মিথ্যা কথা বলেন। মনে রাখবেন, আমি কিন্তু ফোর্সফুলি কোনও জমি নিই না। আমরা নেগোসিয়েট করি, আমরা কম্পেনসেট করি। চাকরি দিই। অনেকেই চাকরি পেয়েছেন। আমরা ১০ হাজার টাকা করে সহায়ক ভাতা দিই।” সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়েও বিজেপি ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কড়া নিন্দা করেছেন মমতা। “ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকারা কাঁদছে…