গত বুধবার আমেরিকার সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, কারচুপি করে ধনী হয়েছেন আদানিরা। শেয়ার বাজারে তাঁদের যে অবস্থান, তার অনেকটাই কৃত্রিম। আর তারপর থেকেই তোলপাড় ভারতের শেয়ার বাজার। বাজার খুললেই রোজ ধস নামছে একের পর একটা সংস্থার শেয়ারে। অবশ্যই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আদানিদের সাতটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার। ধাক্কা খেয়েছে ভারতীয় জীবনবিমা নিগম তথা এলআইসি এবং অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার। বিশেষত, স্টেট ব্যাংকের শেয়ারমূল্য হাজার হাজার কোটি টাকা নেমেছে। এলআইসি ও স্টেট ব্যাংকের বিপুল লগ্নি রয়েছে আদানির সংস্থায়।
হিন্ডেনবার্গের মূল অভিযোগ, আদানিদের সাতটি সংস্থার শেয়ারের মূল্য বাজারে ব্যাপক হারে ফোলানো-ফাঁপানো হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, আদানিদের শেয়ার দর ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। গত বছর আগস্ট মাসে রেটিং সংস্থা ‘ফিচ’ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছিল, আদানির সংস্থার সম্পত্তির মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। নিজেদের সম্পত্তির মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়ে আদানিরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির থেকে অনেক বেশি পরিমাণে ঋণ সংগ্রহ করেছে। আদানির একেকটি সংস্থায় ৩৩ থেকে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাঙ্ক ঋণ রয়েছে বলে দাবি। আদানির সাতটি সংস্থার মধ্যে পাঁচটিরই ‘কারেন্ট রেশিও’ এক শতাংশের চেয়ে কম। কারেন্ট রেশিও হল, কোম্পানির সম্পদ ও দায়ের অনুপাত। কারেন্ট রেশিও এক শতাংশের কম হওয়ার অর্থ হল, কোম্পানির সম্পদের চেয়ে দায় অনেক বেশি।
আগস্ট মাসে ‘ফিচ’ তাদের রিপোর্টে যে-আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, এবার হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে সেটাই প্রকারান্তরে বলা হয়েছে। ‘ফিচ’-এর রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর আদানিদের শেয়ারের দর এভাবে পড়েনি। কিন্তু হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট বাজারে ধস নামিয়ে দিয়েছে। হিন্ডেনবার্গের মূল অভিযোগ, আদানিরা মরিশাস, আরব আমিরশাহি-সহ কয়েকটি ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ভুয়ো কোম্পানি খুলে তার মাধ্যমে শেয়ার বাজারে কারচুপি করে তাদের সাতটি নথিভুক্ত সংস্থার শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। মরিশাস, আরব আমিরশাহি ও এই সব ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে আয়করে ছাড় মেলে। এসব জায়গায় ভুয়ো কোম্পানির মাধ্যমে আদানিরা তাদের সম্পদ সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এসব ভুয়ো কোম্পানিগুলি দেশের শেয়ার বাজারে আদানিদের সংস্থায় লগ্নি করেছে।