ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির শিল্পগোষ্ঠীকে নিয়ে তুঙ্গে বিতর্কের ঝড়। আগামী বুধবার সংসদে পেশ হবে সাধারণ বাজেট। তার আগে আদানি-সংক্রান্ত বিতর্কের মেঘ ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছে। মার্কিন আর্থিক সংস্থা হিন্ডেনবার্গের রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর শেয়ার বাজারে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন গৌতম আদানি। হুহু করে সম্পদ খুইয়েছেন তাঁর সংস্থার বিনিয়োগকারীরা। এহেন পরিস্থিতিতে মার্কিন সংস্থাকে তোপ দেগেছেন ভারতীয় ধনকুবের। তাঁর মতে, পরিকল্পিতভাবে ভারতকে আক্রমণ করতেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে হিন্ডেনবার্গের রিসার্চ, দীর্ঘ ৪১৩ পৃষ্ঠার জবাবে তা খণ্ডন করার চেষ্টা করেছিল এই ভারতীয় শিল্পসংস্থা। তাতে বলা হয়েছিল, হিন্ডেনবার্গ আদানির বিরুদ্ধে কুৎসা করে আসলে ভারতের উপর আক্রমণ শানিয়েছে। কিন্তু সোমবার সকালে তার পাল্টা উত্তর দিল হিন্ডেনবার্গ। তাদের সাফ বক্তব্য, জাতীয়তাবাদ দিয়ে জালিয়াতি ঢাকা যাবে না। আদানি শিল্পগোষ্ঠী ভারতের ভবিষ্যতের পথে অন্তরায় বলেই দাবি করেছে তারা। হিন্ডেনবার্গের তরফে বলা হয়েছে, আসলে দেশের প্রতি আক্রমণের বিষয়টি প্রচার করে নিজের দিক থেকে অভিযোগের তির ঘোরাতে চাইছেন আদানি। পাশাপাশি জাতীয়তাবাদের কথা উল্লেখ করে গোপন করছেন নিজস্ব সম্পদের উত্থানের কথা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ হল একটি মার্কিন শর্ট সেলার সংস্থা। সম্প্রতি তাদের রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছিল যে আদানি শিল্পগোষ্ঠী কীভাবে গত কয়েক বছর ধরে জালিয়াতি করে চলেছে। মরিশাস, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মতো দেশে ভুয়ো কোম্পানি তৈরি করে সেখান থেকে বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে, বেআইনি লেনদেন হয়েছে এবং কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। হিন্ডেনবার্গের ওই রিপোর্টের পর আদানির প্রায় সমস্ত শেয়ারে ধস নামে। মোকাবিলায় নেমে এর জবাব দেয় আদানি শিল্পগোষ্ঠী। এহেন বিবৃতির পরেই পালটা জবাব দেওয়া হয় হিন্ডেনবার্গের তরফে। মার্কিন সংস্থা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়,”ভারতের উন্নতির সঙ্গে নিজের আর্থিক বৃদ্ধিকে জুড়তে চাইছেন আদানি। আমরা মনে করি, ভারত ভবিষ্যতের সুপারপাওয়ার দেশ। তবে ভারতের উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করছেন আদানি নিজেই। গায়ে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে দেশকে লুট করছে আদানি গ্রুপ। বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিও যদি প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলেও তাঁর অপরাধের গুরুত্ব কমে যায় না।” হিন্ডেনবার্গের তরফে আরও বলা হয়েছে, সম্পত্তির আচমকা বৃদ্ধি নিয়ে ৮৮টি প্রশ্ন করা হয়েছিল আদানি গ্রুপকে। তার মধ্যে ৬২টি প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি সংস্থাটি। তারপরেই প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, একদিনে ৪৫ হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে দাঁড়িয়ে আদানি গ্রুপ। তারপরেই এক ধাক্কায় ১১ লক্ষ কোটি টাকা খোয়ান বিনিয়োগকারীরা। সোমবার নতুন করে বাজার খুললে আরও পতন ঘটতে পারে বলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
