মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বারবার বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। বিড়ম্বনায় সম্মুখীন হয়েছেন সাধারণ মানুষ। এবার ফের মাথাচাড়া দিল বিতর্ক। গরিবকে ভাতে মারার ফন্দি আঁটছে মোদী সরকার? ইঙ্গিত মিলেছে তেমনটাই। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার আওতায় ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দফায় রেশনে মাসে মাথাপিছু ৫ কেজি করে অতিরিক্ত চাল-গম দিয়েছিল মোদী সরকার। জানুয়ারি মাসেই বন্ধ হতে বসেছে সেই ব্যবস্থা। পরিসংখ্যান বলছে, এতে মোদী সরকারের কোষাগারের প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতে চলেছে। এখানেই শেষ নয়। এবার অন্যভাবে আরও আয় বাড়াতে চলেছে মোদী সরকার। গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা বন্ধ হওয়ায়, মোদী সরকারের খাদ্য ভাণ্ডারে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত হবে। আয় বাড়াতে সেই চাল-গম খোলা বাজারে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। প্রথম ধাপে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে ৩০ লক্ষ টন গম বিক্রি করা হবে। চলতি জানুয়ারি থেকেই খাদ্য শস্য বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে চাল বিক্রির নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছে মোদী সরকারের খাদ্যমন্ত্রক। কী দামে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত খোলা বাজারে চাল-গম বিক্রি করা হবে, তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও গরিবের চাল-গমে বিন্দুমাত্র ভর্তুকি দিতে চাইছে না মোদী সরকার। যে মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান-গম কিনেছে কেন্দ্র, তার কিছুটা বেশি দামেই বিক্রি করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত খরিফ মরশুমে ২০১৫ টাকা কুইন্টাল দরে কৃষকদের থেকে গম কিনেছিল মোদী সরকার। ই-অকশনে সেই গমের ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে কুইন্টাল প্রতি ২৩৫০ টাকা। ব্যবসায়ী ও ময়দা কলের মালিকদের কাছে সর্বোচ্চ ২৫ লক্ষ টন গম বিক্রি করবে মোদী সরকার। নিলামে অংশগ্রহণ না করেই রাজ্য ও সরকারি সংস্থাগুলি ওই দামে মোট ৫ লক্ষ টন গম কিনতে পারবে। ব্যবসায়ীরা ই-অকশনে চালও কিনতে পারবেন। ভাঙা নিম্নমানের চাল ইথানল উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হবে, তার নূন্যতম মূল্য ধার্য করা হয়েছে ২০ টাকা প্রতি কেজি। সাধারণ চালের মূল্য ২৪ টাকা প্রতি কেজি। চাল কেনার জন্য রাজ্য সরকারগুলিকে নিলামে অংশগ্রহণ করতে হবে না। কিন্তু এক কেজির জন্য ৩৪ টাকা দিতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল দামে, চলতি বছর বাংলা নিজ প্রকল্পের রেশন গ্রাহকদের চাল দেওয়ার জন্য খোলা বাজারে ব্যবসায়ীদের থেকে এর চেয়ে কম দামে চাল কিনেছিল। পাশাপাশি, মোদী সরকারের ভাণ্ডারে মজুত অতিরিক্ত খাদ্যশস্য গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমেই কিছুটা কম দামে দেশের মানুষের কাছে বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়ে মোদীকে চিঠি দিয়েছিল অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশন। বলাবাহুল্য, সে প্রস্তাবে আমল দেয়নি মোদী সরকার। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, জানুয়ারি মাসের শুরুতে কেন্দ্রের ভাণ্ডারে গম ও চাল মজুত রয়েছে যথাক্রমে, ১ কোটি ৫৯ লক্ষ টন ও ১ কোটি ৪ লক্ষ টন। বাফার স্টক হিসেবে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত রাখা বাধ্যতামূলক, তার চেয়ে এই পরিমাণ অনেকটাই বেশি। এর সঙ্গে যোগ হবে নতুন চাল-গম। এই খরিফ মরশুমে ধানের ফলন গোটা দেশেই বেশ ভাল। রবি মরশুমে গমের ফলনও ভাল হবে বলে আশা কৃষি বিশেষজ্ঞদের। তবুও গরিব মানুষের ভাগের চালে কোপ বসাতে চলেছে কেন্দ্র। যা নিয়েই তুঙ্গে পৌঁছেছে বিতর্ক।