রবিবার মহিলাদের প্রথম অনূর্ধ্ব ১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস গড়েছে ভারতের মেয়েরা। ফাইনালে শেফালিদের সামনে কার্যত নাস্তানাবুদ হয়েছে ইংল্যান্ড। উল্লেখ্য, এই বিশ্বকাপজয়ী একাদশের তিন সদস্যাই বঙ্গসন্তান! যাঁদের এক জন সিনিয়র দলের হয়ে আগেই খেলে ফেলেছেন। বাকি দুজন সুযোগ পেতে পারেন অদূর ভবিষ্যতেই। পোচেস্ট্রুমে বিশ্বজয়ের তিন কারিগর রিচা ঘোষ, তিতাস সাধু এবং হৃষিতা বসু। এবারই শুরু হয়েছে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। প্রথম সংস্করণেই চ্যাম্পিয়ন হল ভারত। দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচের সেরা হলেন তিতাস সাধু। হৃষিতা ম্যাচের শেষ দিকে নেমে অপরাজিত থাকলেন। আর ইংল্যান্ডের একটি স্টাম্পড আউটে অবদান ছিল উইকেটরক্ষক রিচার। এই বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন তিন ক্রিকেটারই।
ছোট থেকেই টিম ইন্ডিয়ার জার্সি গায়ে খেলার স্বপ্ন দেখতেন হুগলির চুঁচুড়ার মেয়ে তিতাস। চুঁচুড়ার মাঠে নিয়মিত অনুশীলন করেই ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সেই মাঠে তাঁর কোচ ছিলেন প্রিয়ঙ্কর মুখোপাধ্যায়। প্রিয়ঙ্কর আগেই বলেছিলেন, “ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো জায়গায় রয়েছে। বেশ কয়েক জন সিনিয়র ক্রিকেটার রয়েছে। তিতাস যে ভাবে খেলছে তাতে আগামী দিনে সে আরও ভাল খেলবে। ও খুব বুদ্ধিমতী। তাড়াতাড়ি শিখে নিতে পারে।” তিতাসের ছোটবেলার কোচ দেবদুলাল রায়চৌধুরী বললেন, “তিতাস ভাল বল করে। ওর আত্মবিশ্বাস আছে। ভাল বল করছে। ব্যাট হাতে সুযোগ পেলে রানও করবে।” পরিবারের নাম উজ্জ্বল করতে পেরে গর্বিত তিতাসও। তিনি বলেছেন, “আমি জানি পরিবার আমার খেলা দেখে খুশি। ওরাও নিশ্চয়ই গর্বিত। নিজের পরিশ্রম কাজে লাগাতে পেরেই সাফল্য পেয়েছি।” এদিন ইংল্যান্ডের ইনিংসের শুরুতেই চার ওভারে ছ’রান দিয়ে দু’টি উইকেট তুলে নেন তিনি। সেটাই ম্যাচের গতিপ্রকৃতি অনেকটা ঠিক করে দেয়। ওই ধাক্কা থেকে আর বেরোতে পারেনি ইংল্যান্ড। ম্যাচের সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আপ্লুত তিতাস। “অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। বিশ্বাসই হচ্ছে না। অনেক দিন ধরে এই দিনটার জন্যে অপেক্ষা করে ছিলাম। আজ খেলতে নামার আগে থেকেই আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। সেটা কাজে লাগিয়েছি। আমরা এখানে দু’টি ম্যাচ খেলেছি। বাকি যে ম্যাচগুলো হয়েছে সেগুলোও দেখেছি। তাই কোথায় বল করতে হবে সেটা আগে থেকেই জানতাম”, জানিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি, ভারতের সিনিয়র মহিলা দলের হয়ে অনেক ম্যাচেই খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে শিলিগুড়ির রিচার। কিছু দিন আগেও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে খেলেছেন। কয়েক দিন পরেই মহিলাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাবেন। তার আগে ছোটদের মঞ্চে ভাল খেলে পেয়ে গেলেন বাড়তি আত্মবিশ্বাস। ম্যাচের পর বললেন, “প্রথম বার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ হয়েছে আর শুরুতেই আমরা চ্যাম্পিয়ন। এই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। দারুণ লাগছে।” সিনিয়রদের বিশ্বকাপে এই অভিজ্ঞতা কতটা কাজে লাগবে, সেই প্রসঙ্গে রিচা বলেছেন, “কিছু দিন বাদেই ওই প্রতিযোগিতা খেলতে যাব। আজকের অভিজ্ঞতা সেখানে খুবই কাজে লাগবে। এখান থেকে যা কিছু শিখলাম, যে যে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা পেলাম সবই বিশ্বকাপে কাজে লাগাব। একটা বিশ্বকাপ জিতেছি। ওই বিশ্বকাপটাও জিততে পারলে দারুণ লাগবে। তবে একটা একটা ম্যাচ ধরেই এগোতে চাই।”
আরেক বঙ্গতনয়া হৃষিতা উঠে এসেছেন হাওড়ায় লক্ষ্মীরতন শুক্লার অ্যাকাডেমি থেকে। অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষক চরণজিৎ সিংহের কাছেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি হয় বছর আঠারোর ভারতীয় ব্যাটারের। আট বছর ধরে চরণজিতের নজরদারিতে অনুশীলন করেছেন তিনি। পেয়েছেন লক্ষ্মীর পরামর্শও। এই বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে নিয়মিতই খেলেছেন হৃষিতা। ফাইনালেও অপরাজিত থেকেছেন শেষের দিকে নেমে। রবিবার ম্যাচের আগে মা মালবিকা বসুর সঙ্গে কথা হয় হৃষিতার। ‘‘মেয়ে তো মোটামুটি নিশ্চিতই ছিল যে, ওরাই চ্যাম্পিয়ন হবে। মেয়ের আত্মবিশ্বাস দেখে সত্যিই ভাল লাগছিল। কিন্তু ভীষণ টেনশন হচ্ছিল। এই মুহূর্তটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম’’, ম্যাচ শেষের পর জানিয়েছেন হৃষিতার মা।