ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলার প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ অব্যাহত রেখেছে মোদী সরকার। বারবার উঠে এসেছে বঞ্চনার অভিযোগ। যা কোনওমতেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। বাংলায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকে কেন্দ্রের এহেন কর্মকাণ্ড ক্রমশ বাড়ছে। পঞ্চায়েত দফতরের মাধ্যমে চলা ১০০ দিনের কাজ, আবাস প্রকল্পের টাকা বহু দিন ধরেই বন্ধ রেখেছে মোদী সরকার। এবার বাংলার সমবায়ের কাজেও নজর দিয়েছে তারা। তবে কি বাংলাকে অর্থনৈতিকভাবে দিশেহারা করার ছক কষেছে মোদী সরকার? প্রশ্ন উঠছে এমনই। উল্লেখ্য, গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তিই হল সমবায়। বাংলাও তার ব্যতিক্রম নয়। স্বশাসিত সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিগুলির মাধ্যমে সারা বছর ধরে কৃষকদের ঋণ প্রদানের কাজ চলে। এবার তাতেও নাক গলাতে শুরু করেছে মোদী সরকার, এমনই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। সূত্র অনুযায়ী, সমিতিগুলির আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসেব ও অডিট সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে অমিত শাহের সমবায় মন্ত্রক। যদিও বাংলার সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়ের দাবি, বাংলায় সমবায়ের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখে, নিয়ম মেনে হয়। চেষ্টা করলেও বাংলাকে সমস্যায় ফেলতে পারবে কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রায় ৬,০০০ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি রয়েছে বাংলায়। গ্রামীণ উন্নয়ন এবং গ্রাম বাংলার কৃষিকাজকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সমবায়। বিশেষজ্ঞদের মত, সমবায়ের কাজকর্ম আংশিক বন্ধ করতে পারলেও, গ্রামীণ অর্থনীতি বিপদে পড়বে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিগুলির তথ্য একটি পোর্টালে তুলতে নির্দেশ দিয়েছে মোদী সরকার। গ্রামীণ এলাকার মানুষের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজ্য। কিছু বছর আগেও বাংলার প্রায় ৭১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও ব্যাঙ্কের পরিষেবা ছিল না। সেই এলাকাগুলিসহ বাংলায় ২,৬৩১টি কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট তৈরি করেছে রাজ্য। যা গোটা দেশে সর্বাধিক। এই কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্টগুলির মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং সুবিধা পায় বাংলার মানুষ। এই চলতি অর্থবর্ষে সমবায় ক্ষেত্রে বাজেট বাড়িয়ে ৫৭২ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কৃষির পাশাপাশি পশুপালনেও সাহায্য করে সমবায়। ইতিমধ্যে রাজ্যের এক লক্ষ পরিবারকে পশুপালন ক্ষেত্রে স্বনির্ভর করতে ১৮০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি। কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, মৎস্যজীবী ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে, কৃষক, মৎসজীবীরাও উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু পঞ্চায়েতের আগে পুরো ব্যাপারটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যাহত করার অভিযোগ উঠছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। তবে কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই গ্রাম বাংলাকে তিমিরে ঠেলে দিতে উদ্যত মোদী-শাহ? তেমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।