তাঁর গেরুয়াশিবিরে যোগ দেওয়া নিয়ে সম্প্রতি রাজনৈতিক মহলে যে জল্পনা শুরু হয়েছিল, এবার তা নিমেষে নস্যাৎ করে দিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ সুপ্রিমো নীতিশ কুমার। আজ, বুধবার পাটনায় এক অনুষ্ঠানে তিনি সাফ জানান, মহাজোট ছেড়ে বিজেপির হাত ধরার প্রশ্নই ওঠে না। “আমার সম্পর্কে এমন কথা যাঁরা রটাচ্ছে, তাঁরাই আসলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। বিজেপিতে যেতে চাইলে তাঁরা যেতেই পারেন। কাউতে বেঁধে রাখা হয়ন”, বলেন তিনি। গত বছর আগস্টের গোড়ায় দ্বিতীয়বারের জন্য বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন নীতিশ। লালুপ্রসাদের আরজেডির নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার নিজের দখলে রেখেছেন জনতা দল ইউনাইটেডের এই শীর্ষনেতা। ছয় মাস আগের সেই পর্বেই নীতিশ ঘোষণা করেছিলেন, আর কখনও বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবেন না তিনি। সম্প্রতি, জনতা দল ইউনাইটেডের নেতা তথা দলের সংসদীয় বোর্ডের চেয়ারম্যান উপেন্দ্র কুশওহা ইঙ্গিত দিয়ে আসছিলেন যে নীতিশ ফের ডিগবাজি খেতে প্রস্তুত হচ্ছেন। “জেডিইউতে যিনি যত বড় নেতা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর তত খাতিরের সম্পর্ক”, এমনও দাবি করেছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উপেন্দ্রর সঙ্গে নীতিশের সম্পর্ক আদতে ভাল নয়। জনতা দলের এই নেতার বাসনা ছিল, নীতিশ তাঁকে উপমুখ্যমন্ত্রী করবেন। জেডিইউ-র শীর্ষ নেতা সেই পথে না হেঁটে শুধু জোট শরিক আরজেডির তেজস্বী যাদবকে ওই পদে বসিয়েছেন। এখন নানা ব্যাপারে আরজেডির সঙ্গে জেডিইউ-র মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে। লালুপ্রসাদের পার্টির একাংশ বলতে শুরু করেছে, নীতিশ এবার জাতীয় রাজনীতিতে মন দিন। রাজ্যের ভার ছেড়ে দিন তেজস্বীর হাতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নীতীশ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন, পরের বিধানসভা নির্বাচনে তেজস্বীই হবেন মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী মুখ। কিন্তু তাতেও আরজেডির নেতাদের মুখে লাগাম দেওয়া যায়নি। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী আরজেডি নেতা চন্দ্রশেখর প্রকাশ্যেই রামচরিতমানসের নিন্দা করেছেন। তা নিয়ে বিজেপির পাশাপাশি নীতিশের দল জেডিইউ-ও সরব হয়েছে। গেরুয়া শিবিরের মতো জেডিইউ-ও দাবি তুলেছে চন্দ্রশেখরকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করা হোক। এ নিয়ে দুই শরিকের ঝগড়া তুঙ্গে উঠেছে। এই সুযোগে নীতীশকে বিপাকে ফেলতে উপেন্দ্র আরজেডির বিরুদ্ধে গলা ছেড়েছেন। সেই সঙ্গে ইঙ্গিত করছেন, নীতিশ তলে তলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। উল্লেখ্য, বিহারের রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে যে বিজেপিতে যেতে পারেন উপেন্দ্রই। নীতিশের সঙ্গে তাঁর বনিবনা হচ্ছে না। আবার দলে নীতিশের বিরুদ্ধেও কাউকে পাশে পাচ্ছেন না তিনি। অগত্যা তাঁর পদ্মপরিবারে যোগদান স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। নীতিশ আজ নাম না করে এই প্রবীণ নেতাকেও একহাত নিয়েছেন। “দরজা খোলাই আছে। যেতে চাইলে যে কেউ যে কোনও দলে যেতে পারেন। দলে কাউকে বেঁধে রাখা হয়নি, হবেও না”, কটাক্ষ জেডিইউ সুপ্রিমোর।