প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেশজুড়ে ক্রমশ দাম বাড়ছে স্মার্টফোনের। অথচ দেশবাসীর পকেটে বাড়ছে টান। মোদী সরকার যখন মানুষকে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে বেছে নেওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে, তখনই বিপরীতদিকে ধরা পড়েছে অন্য ছবি। ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারীর সংখ্যা নতুন করে আর বাড়ছে না। বরং তা একটা জায়াগায় এসে থমকে গিয়েছে। সম্প্রতি টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া নিজেই এই কথা জানিয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দিক থেকে, ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অনলাইন বাজার। গত এক দশকে দেশ ব্যাপক বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে এক্ষেত্রে। লাফিয়ে লাফিয়ে নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, গত দুই বছরে নতুন ইন্টারনেট ইউজারের সংখ্যা আর সেভাবে বাড়েনি। প্রায় ৮০০ মিলিয়নে (৮০ কোটি) এসেই থমকে রয়েছে সেই অঙ্ক। ভারতের টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থার দেওয়া তথ্য বলছে, ২০২২ সালে এদেশে ইন্টারনেট সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ছিল ৮৩৭ মিলিয়ন (৮৩ কোটি ৭০ লক্ষ)। এর মধ্যে ৯২ শতাংশ সাবস্ক্রাইবার মোবাইল ব্রডব্যান্ড কানেকশন ব্যবহার করেন। প্রতি সেকেন্ডে ৫১২ কিলোবিট ইন্টারনেট গতির কানেকশনকে ব্রডব্যান্ড হিসেবে গণ্য করে ট্রাই।
উল্লেখ্য, বিগত ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহাকারীর সংখ্যা ছিল ৭৩৪ মিলিয়ন (৭৩ কোটি ৪০ লক্ষ), ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে এসে সেই সংখ্যা পৌঁছায় ৭৮৯ মিলিয়নে (৭৮ কোটি ৯০ লক্ষ)। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পাঁচ বছরে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছিল প্রতি বছর। কিন্তু, ২০২১ সালে এলে সেই গতি শুধু মন্থর হয়ে পড়েনি, বরং থমকে গিয়েছে বলতে হবে। বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মার্টফোনের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বিগত দুই বছরে। তার অন্যতম কারণ হল, গোটা বিশ্বজুড়ে সাপ্লাই চেইনের সমস্যা এবং চিপ শর্টেজ। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সরকার নিজেও জানিয়েছে, চীনের পর ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক দেশ হলেও, মোবাইল ফোনের অন্যতম মূল উপাদান সেমিকন্ডাক্টর এখনও বাইরে থেকে আমদানি করতে হয় ভারতকে। সেমিকন্ডাক্টর হল স্মার্টফোনের এমন একটি উপাদান, যা মোবাইল ফোনকে সচল রাখতে অপরিহার্য। বাজার গবেষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেটা কর্পোরেশন-এর দেওয়া তথ্য বলছে, কোভিড-১৯ প্যানডেমিক পর্ব শুরুর সময় থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত স্মার্টফোনের দাম ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শাওমি, ওপো এবং স্যামসাং-এর মতো নামজাদা স্মার্টফোন নির্মাতা সংস্থাগুলি দামি বাড়িয়েছে তাদের প্রোডাক্টের। কাউন্টারপয়েন্ট নামে অপর একটি মার্কেট রিসার্চ কোম্পানি জানিয়েছে, ভারতে নতুন করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রত্যাশা মতো ঊর্ধ্বমুখী না হওয়ার দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথমত, মোবাইল ফোন তৈরির করার জন্য যে উপাদান প্রয়োজন, তার ঘাটতি। দ্বিতীয় কারণ হল, মোবাইলের উচ্চতর খুচরো মূল্য অর্থাৎ রিটেইল প্রাইস এবং মুদ্রাস্ফীতি।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে মোবাইল ফোনের চাহিদা বাড়লেও, সেই অনুযায়ী সরবরাহ ছিল না। টেলিকম বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতে এই মুহূর্তে তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে এদেশের স্মার্টফোন বাজার আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করলেও করতে পারে। কিন্তু তার জন্য কেন্দ্র সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। মোবাইল ফোনের চিপ তৈরির জন্য নতুন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করতে ইনসেন্টিভ (আর্থিক সহযোগিতা) দিতে হবে। ২০২১ সালের এপ্রিলে ভারত সরকার মোবাইলের যন্ত্রাংশ, সেমিকন্ডাক্টর এবং ডিসপ্লে নির্মাণকারী কোম্পানিগুলিকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ৭৬০ বিলিয়ন (৭৬,০০০ কোটি) টাকা ইনসেন্টিভ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু, বাস্তব চিত্র হল, ভারতে ৮০ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারী থাকলেও, মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ফোন দেশে তৈরি হয়। চাহিদা সামাল দিতে বেশিরভাগ স্মার্টফোনই বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। যার ফলে মোবাইলের দাম অনেকটাই বেড়ে যায়। কেন্দ্র সরকার আগামী দিনে দেশে আরও বেশি পরিমাণ মোবাইল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিলেও, তা বড় জোর ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ হবে। চাহিদার তুলনায় এই সংখ্যা অনেকটাই কম। সেইসঙ্গে বিদেশি ফোন কোম্পানিগুলিকে ভারতে ব্যবসামুখী করে তুলতে প্রয়োজন সঠিক বাণিজ্য ও ব্যবসা নীতি, এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।