বাংলার রাজ্যপাল থাকাকালীন কার্যত রাজ্যকে ‘বাইপাস’ করে সরাসরি উপাচার্যদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছিলেন জগদীপ ধনকর। নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপাচার্যদের সরাসরি চিঠিও পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেসময় রাজ্য-রাজ্যপাল বিবাদ এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালের অপসারণের প্রক্রিয়াও শুরু করেছিল রাজ্য সরকার। উপাচার্য পদ থেকে রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে একটি বিলও পাশ করানো হয়েছিল রাজ্য বিধানসভায়। তবে ধনকর জামানা এখন অতীত। এখন আর বিরোধ নয়, শিক্ষার উন্নতিতে সমন্বয় রেখেই কাজ করতে চায় রাজ্যের শিক্ষা দফতর এবং রাজভবন। মঙ্গলবার উপাচার্যদের সঙ্গে রাজ্যপাল এবং শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক শেষে একযোগে এমনই বার্তা দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। মঙ্গলবারের বৈঠক থেকে বেরিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং একই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা, এখন থেকে রাজভবন এবং শিক্ষা দফতরের মধ্যে ‘বিরোধ নয়, সমন্বয়’ জারি থাকবে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে প্রথম বার বৈঠকে বসেন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যেরা। রীতি মেনে শিক্ষা দফতরকে মাঝে রেখেই হয়েছে আলোচনা। এদিন রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে ব্রাত্য বলেন, ‘এবার থেকে রাজভবন, নবান্ন এবং বিকাশ ভবন এক সুরে কাজ করবে।’ তিনি এ-ও জানান, ‘মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে বৈঠক করেছি। আজকের বৈঠকের নির্যাস ফলপ্রসূ হয়েছে। বিরোধ নয় সমন্বয়, এটাই আমাদের বিভাগের সঙ্গে রাজভবনের তাৎপর্যপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ হিসাবে জারি থাকবে।’ তাঁর কথায়, ‘আমাদের মহামহিম রাজ্যপাল তথা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের সঙ্গে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছে। এই প্রথম রাজভবনে রাজ্যপালের অনুজ্ঞায় আমি, আমার বিভাগীয় প্রধান এবং সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব উপাচার্যদের নিয়ে রাজভবনে বৈঠক করেছি।’
মঙ্গলবারের বৈঠক যে ফলপ্রসূ হয়েছে সে কথা জানিয়েছেন খোদ রাজ্যপালও। তিনি বলেন, ‘আমাদের খুবই উৎসাহজনক, অনুপ্রেরণাদায়ক আলোচনা হয়েছে। আলোচনার সারমর্ম, নতুন প্রজন্মের কাছে শিক্ষার সব দরজা খুলে দেওয়া। যাতে নতুন প্রজন্ম বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষা সব থেকে শক্তিশালী হাতিয়ার। সমাজে পরিবর্তনের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। উপাচার্যেরা অসাধারণ পরামর্শ দিয়েছেন। সব নিয়েই ভাবনাচিন্তা হবে। নতুন বাংলা হবে, সেই বাংলা দেশকে এবং দেশ বিশ্বকে পথ দেখাবে। যা গুরুদেব বলেছেন, চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির।’ উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক অতীতে শিক্ষামন্ত্রী তো বটেই, রাজভবনে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেননি উপাচার্যরাও। তবে মঙ্গলবার তাঁরা সকলেই রাজভবনে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন। ব্রাত্য বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ দেব আচার্যকে, যে ভাবে উনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তার জন্য। অতীতে যদি কোনও বাষ্প থেকে থাকে, তার সম্পূর্ণ অপনোদন ঘটল আজ থেকে। আমাদের দারুণ মিটিং হয়েছে। দারুণ মধ্যাহ্নভোজ হয়েছে।’