একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকেই অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত বঙ্গ বিজেপি। একের পর এক দল ছেড়েছেন নেতারা। ক্রমশ দুর্বল হয়েছে সংগঠন। পরবর্তী নির্বাচনগুলিতেও ফল হয়েছে শোচনীয়। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন বাংলায়। তার আগে ফের দলের ক্ষমতাসীন শিবিরের সঙ্গে প্রকাশ্যে চলে এল বিজেপির বড় অংশের সংঘাত। সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারীরা কার্যত তিন মেরুতে বিভক্ত। আর সেই পরিস্থিতির মধ্যেই ফের সংগঠিত হওয়ার কাজ শুরু করে দিল বঙ্গ বিজেপির বিক্ষুব্ধ শিবির। রবিবার বিজেপি নেতারা যখন কর্মসূচীতে বিভিন্ন জেলায় ব্যস্ত, তখন বিজেপির রাজ্য দফতরের কাছেই সূর্য সেন স্ট্রিটে হয়ে গেল বিক্ষুব্ধ শিবিরের একাংশের গোপন বৈঠক। ‘বিজেপি বাঁচাও’ মঞ্চের ব্যানারে সেই বৈঠকে পাঁচটি জেলা থেকে আসা গেরুয়া শিবিরের প্রাক্তন জেলাস্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আর সেই বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ১৯শে জানুয়ারি দলীয় কর্মসূচিতে রাজ্যে এলে জে পি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হবে বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের তরফে। বঙ্গ বিজেপির কোন্দলের বিষয়টি নাড্ডার সামনে তুলে ধরতে চান বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের প্রতিনিধিরা। সাক্ষাতের জন্য আর্জি জানিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতিকে রবিবার রাতে চিঠিও পাঠিয়েছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপির একাংশ।
উল্লেখ্য, বিধানসভা ভোটের হারের পর থেকেই রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ফাটল প্রকাশ্যে এসেছে। রাজ্য বিজেপির বর্তমান ক্ষমতাসীন শিবিরের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর থেকে শুরু করে সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। দল পরিচালনা নিয়ে দলীয় বৈঠকে সুকান্ত মজুমদার ও অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আরেক সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। এরপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুকান্ত-দিলীপ ও শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে দূরত্ব সামনে এসেছে। এসবই দিল্লীর নজরে রয়েছে। এই পরিস্থিতি পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০২৪-এ লোকসভা ভোটের কথা ভেবে দলকে চাঙ্গা করতে হলে অযোগ্য ও কাজ না করা শুধু পদ আঁকড়ে পড়ে থাকা নেতাদের দায়িত্ব থেকে সরানো প্রয়োজন। পুরনো ও যোগ্যদের গুরুত্ব দেওয়ার দাবি তুলেছে বিক্ষুব্ধ শিবির। দ্বন্দ্ব মেটাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কড়া বার্তার পরও পরিস্থিতি বদলায়নি। দলের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর অপসারণের দাবিতে সরব দলের বড় অংশ। এরই মধ্যে জে পি নাড্ডার কাছে রাজ্য বিজেপির ডামাডোল অবস্থার ছবিটা তুলে ধরতে চায় বিক্ষুব্ধ শিবিরের বড় অংশ। রবিবার সূর্য সেন স্ট্রিটে ত্রিপুরা হিতসাধিনী সভা হলে বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের তরফে প্রাক্তন নেতৃত্ত্ব দীপক সরকার, শামসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে হাজির ছিলেন দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, বীরভূম, কলকাতা জেলা থেকে প্রাক্তন মণ্ডল, ওয়ার্ড সভাপতি ও জেলা কমিটির প্রাক্তন সদস্যদের অনেকেই।