এবার মোদী সরকারের ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে সরব হলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। কেন্দ্রের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করলেন তিনি। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমর্ত্যবাবু বলেন, “জাতীয় সংহতি রক্ষায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলার কথা বলেছিলেন গান্ধীজি। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সিএএ লাগু করতে চলেছে। এই আইন দেশে একবার লাগু হয়ে গেলে সংখ্যালঘুরা গুরুত্ব হারাবেন। প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে বেশি গুরুত্ব পাবেন হিন্দুরা। কারণ হিন্দুরাই এদেশে সংখ্যাগুরু গোষ্ঠী। সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরা নানা সমস্যার মুখে পড়তে পারেন।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৯-র ১১ই ডিসেম্বরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পার্লামেন্টে পাস করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। তবে তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই আইনের রূপরেখা এখনও তৈরি করে উঠতে পারেনি সরকার। তবে ফের দ্রুত সিএএ আইনের রূপরেখা তৈরি করে লাগু করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।
পাশাপাশি, সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেন, বিজেপি ২০২৪ লোকসভা ভোট জিতে গিয়েছে ধরে নেওয়াটা মস্ত বড় ভুল হবে। তাঁর মতে, “একাধিক আঞ্চলিক দল ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ডিএমকে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, তৃণমূল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সমাজবাদী পার্টিরও শক্তি আছে। তবে ওরা কতদুর যাবে সেটা জানি না।” অমর্ত্যর অভিযোগ, “বিজেপি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। ভারত সম্পর্কে ধারণাটাকে এরা এত সংকীর্ণ করে দিয়েছে যে এখন ভারতকে শুধু হিন্দু ভারত বা হিন্দি বলয়ের ভারত হিসাবে দেখা হচ্ছে। যদি বিজেপি’র কোনও বিকল্প না পাওয়া যায় তাহলে দেশের বাকি অংশের প্রতি সেটা অন্যায় করা হবে।” রাজনৈতিক দলগুলিকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিজেপি প্রবল প্রতাপশালী হলেও, তাঁদের দুর্বলতাও আছে। তিনি বলেছেন, অন্য দলগুলিও চেষ্টা করলে সুযোগ তৈরি করতে পারে। আলোচনায় চলে আসতে পারে। বিজেপি বিরোধী দলগুলি একত্রিত হতে পারবে না, এমন কোনও তথ্য আমার জানা নেই। তবে একই সঙ্গে তিনি মেনে নিয়েছেন, একা কংগ্রেসের পক্ষে আর বিজেপিকে হারানো সম্ভব নয়। কারণ কংগ্রেস অনেক দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায় পরিস্কার, ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, সে বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন অমর্ত্যবাবু।