বাংলার প্রতি কেন্দ্রের দুয়োরানিসুলভ আচরণ এখনও অব্যাহত। এখনও মেলেনি একশো দিনের কাজের টাকা। এবার আবাস প্লাস প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়েও টালবাহানা শুরু করল মোদী সরকারের। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন এ রাজ্যে। তার আগে বাংলাকে সমস্যায় ফেলতেই এমন কৌশল, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। আবাস প্লাস নিয়ে আগেএকগুচ্ছ কড়া শর্ত চাপিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু তাতে বাংলা বেকায়দায় পড়েনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই যাবতীয় শর্ত পূরণ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১১ লক্ষ উপভোক্তাকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলতে পারেনি মোদী সরকার। কিন্তু তারপরেও পাঠানো হচ্ছে না কেন্দ্রের ভাগের বরাদ্দ ৮ হাজার কোটি টাকা। এক সপ্তাহ আগে তা পাঠানোর কথা ছিল। এভাবেই নিজেদের বেঁধে দেওয়া শর্ত ভেঙেছে কেন্দ্রীয় সরকার। উলটে ফের পাঠানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল।
প্রসঙ্গত, বাংলাকে মোট ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮টি বাড়ি নির্মাণে টার্গেট দেয় কেন্দ্র। আর বেঁধে দেওয়া হয় ছ’দফা শর্ত। তার মধ্যে অন্যতম হল, ট্রেজারি থেকে অর্থ অনুমোদনের একসপ্তাহের মধ্যে সরাসরি প্রত্যেক উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির টাকা পাঠাতে হবে রাজ্যকে। বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে ৩১শে ডিসেম্বর। তারপর প্রায় দু’সপ্তাহ কাটতে চলেছে। রাজ্যের ভাগের ৪,৮০০ কোটি টাকা তৈরি রেখেছে অর্থদফতর। কিন্তু কেন্দ্রের ভাগের ৬০ শতাংশের (৮,২০০ কোটি) এক নয়া পয়সাও ছাড়া হয়নি। পুরনো আবাস যোজনার এক হাজার কোটি টাকা হাতে রয়েছে রাজ্যের। কিন্তু কেন্দ্র সেই পোর্টাল ‘ব্লক’ করে রাখায় ওই অর্থ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তার জেরে চলতি অর্থবর্ষের মধ্যে ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরি কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে সর্বত্র। অন্যদিকে কেন্দ্র নিজের ভাগের টাকা ছাড়ার পরেই একমাত্র এই কাজ সম্ভব। না হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ৯৫ শতাংশ উপভোক্তার নাম চূড়ান্ত তালিকায় তোলাই সার হবে। আবাস প্লাস প্রকল্পের বাড়ি তৈরি করা যাবে না। বিষয়টি উল্লেখ করে ইতিমধ্যে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে চিঠি পাঠিয়েছে নবান্ন। উলটে নবান্নে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল বাংলায় ফের আসছে। এবার ১০টি জেলায় তাঁরা কাজ খতিয়ে দেখবেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “এটাই তো সুকৌশলে রাজ্যকে বেকায়দায় ফেলার ফন্দি। এমন ঘটনা ঘটলে রাজ্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।” জানুয়ারি মাসের শুরুতে আবাস প্লাসের তালিকা যাচাইয়ের কাজ খতিয়ে দেখতে মালদা ও পূর্ব মেদিনীপুরে এসেছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। এবার আবার আসছে ১০ জেলায় কাজ খতিয়ে দেখতে। তাদের রিপোর্টের অজুহাত দেখিয়েই কি আটকে রাখা হয়েছে টাকা? উঠছে এমনই প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে তুঙ্গে বিতর্কের ঝড়।
