বিগত কয়েকবছর ধরে লাগাতার ভূমিধস চলছিলই। রাতারাতি বসে যাচ্ছিল মাটি। ফাটল ধরছিল একের পর এক বাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তাতেও। তবে গত বৃহস্পতিবারের পর থেকে ক্রমশই আরও বড় হচ্ছে উত্তরাখণ্ডের যোশীমঠ বিপর্যয়। বাড়ি, রাস্তা, পাহাড়, বাগান— সর্বত্র শুধু ফাটল আর ফাটল। আস্তে আস্তে আলগা হচ্ছে মাটি। সরে সরে যাচ্ছে পাথর। ধসে পড়ছে বদ্রীনাথ ও হেমকুণ্ড সাহিব, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স-সহ একাধিক স্থানে যাওয়ার ‘গেটওয়ে’ জোশীমঠ। হিন্দি সংবাদপত্র ‘দৈনিক ভাস্কর’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আর কেউ বাঁচাতে পারবে না যোশীমঠকে। তাঁদের একটি অংশের মতে, আজকের যোশীমঠের এমন অকাল বিসর্জনের আসল কারণ লুকিয়ে এক সুড়ঙ্গের গভীরে।
প্রসঙ্গত, উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল পাহাড়ের কোলে ছোট্ট জনপদ যোশীমঠ। ১৯৩৯-এ প্রথম বার এই জনপদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ওঠে। তার পর কেটে গিয়েছে ৮৪ বছর। সে দিনের ছোট্ট জনপদ আজ রীতিমতো বড় শহর। কিন্তু বিপদের ঘণ্টা বেজেছিল ২০০৯-এ। সেই বছরের ২৪ ডিসেম্বর যোশীমঠের কাছেই এক পাহাড়ের পেটে আচমকা থমকে যায় একটি ‘টানেল বোরিং মেশিন’ (টিবিএম)। কারণ, সামনে হাজার হাজার গ্যালন জল! কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের তৈরি যন্ত্র প্রকৃতির তৈরি একটি বিরাট জলভান্ডারে ছিদ্র করে দিয়েছে। সেই ছিদ্র দিয়ে বেরোচ্ছে হাজার হাজার গ্যালন জল। একটি হিসাব অনুযায়ী, দীর্ঘ সময় ধরে দৈনিক ৬ থেকে ৭ কোটি লিটার জল সেখান দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। একটা সময় নিঃশেষ হয়ে যায় সেই বিপুল জলভান্ডার।
এর ফলে এলাকার যত ছোটখাটো ঝরনা ছিল, সবই যায় শুকিয়ে। জলের বিভিন্ন উৎসেরও একই অবস্থা হয়। আর একেই জোশীমঠের কফিনে শেষ পেরেক হিসাবে অভিহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের দাবি, ওই বিপুল জলভান্ডার শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে এলাকার মাটি শুকিয়ে যায়। তা হয়ে যায় ঝুরঝুরে, ফাঁপা। ফলে পাহাড় ভাঙার ধ্বংসাবশেষের উপর দাঁড়িয়ে থাকা জোশীমঠের ধ্বংসও কার্যত সময়ের অপেক্ষা। উল্লেখ্য, টিবিএম দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কারণ হল জোশীমঠের কাছেই তৈরি হচ্ছে ‘বিষ্ণুগড় হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রোজেক্ট’। এনটিপিসির এই প্রকল্পে বাঁধ দিয়ে নয়, ব্যারাজের মাধ্যমে নদীর জলকে পাহাড়ি সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। সেই সুড়ঙ্গ খুঁড়তে গিয়েই বিপত্তির শুরু। যার ফল আজ ভোগ করতে হচ্ছে যোশীমঠবাসী।