এককথায়, টিকিটিও মিলল না তাঁর! ‘শহিদ স্মরণ’-এর দিনে নেতাই গ্রামের চৌহদ্দিতেও দেখা গেল না বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। এবছরও রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে সামনে রেখে ২০১১ সালের ৭ই জানুয়ারি সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের গুলিতে শহিদদের শ্রদ্ধা জানালেন নেতাই গ্রামের বাসিন্দারা। উল্লেখ্য, গত বছর নেতাইয়ে ‘শহিদ স্মরণে’ গিয়েও লালগড় থেকে ফিরতে হয়েছিল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। কারণ, তাঁকে সেদিন ঢুকতেই দেননি নেতাইয়ের বাসিন্দারা। অভিযোগ ছিল, শহিদের বেদীতে দেওয়া যাবে না সাম্প্রদায়িক বিজেপির ছোঁয়া। শনিবার তৃণমূল জানিয়েছে, মাসখানেক আগে জঙ্গলকন্যা বীরবাহা বিরোধী দলনেতাকে যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন, তার চাপে পড়েই জঙ্গলমহলের ধারেকাছে ঘেঁষেননি শুভেন্দু। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন শুভেন্দুকে। “আদিবাসী নেত্রী মন্ত্রী বীরবাহাকে একবছর আগে জুতার তলায় রাখার দাবি করে শুভেন্দু যে অপমান করেছিলেন, তার জবাব দিতে প্রস্তুত ছিলেন জঙ্গলকন্যা। বলেছিলেন, দম থাকলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা ছেড়ে ঝাড়গ্রামে আসুন বিরোধী দলনেতা। আমিও মন্ত্রীর নিরাপত্তা ছেড়ে মানুষের সঙ্গে থাকব। এই চ্যালেঞ্জ রাখা দূরের কথা, ভয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরমুখো হননি শুভেন্দু”, বক্তব্য কুণালের।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এদিন সকাল সাতটা থেকে নেতাইয়ে উপস্থিত ছিলেন বীরবাহা। দিনভর শহিদ স্মরণের আয়োজনের নেতৃত্বে দিয়েছেন তিনি। বিকেল চারটা পর্ষন্ত শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটি পক্ষ থেকে শহিদ তর্পণ করেন তৃণমূল নেতৃত্ব থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা। মঞ্চ থেকে বাংলায় উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি সিপিএম, বিজেপিকে কড়া ভাষায় একহাত নিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। শহিদ তর্পণ করে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান, “বামফ্রন্টের আমলে গ্রামে যারা বিরোধিতা করতেন তাদের পুকুরে বিষ দিয়ে দেওয়া হত, সামাজিকভাবে বয়কট করে দেওয়া হত। সিপিএমের এই ছিল পলিসি। কিন্তু এখন, মানুষদের মধ্যে যদি ক্ষোভ সৃষ্টি হয় তাহলে তৃণমূল বলছে, সোজা মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে হবে। মানুষ কী পেয়েছে আর কী পায়নি সেটা পৌঁছে দিতে হবে মানুষের কাছে। এটাই তৃণমূল আর সিপিএমের মধ্যে পার্থক্য।’’ অন্যদিকে রাজ্যের রাজ্যের জল সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন ও পরিবেশ দফতরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘প্রত্যেক বুথে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞেস করুন রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা ঠিক মতো পাচ্ছেন কি না। কেউ যেন বাদ না যায় সেটা দেখতে হবে।’’ শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বনদফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, বিনপুরের বিধায়ক দেবনাথ হাঁসদা, গোপীবল্লভপুর বিধানসভার বিধায়ক চিকিৎসক খগেন্দ্রনাথ মাহাতো, ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান কবিতা ঘোষ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস, মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত বিধায়ক দিনেন রায়, অজিত মাইতি প্রমুখ। এদিন শহিদ তর্পণের পরে কোনও বক্তব্য রাখেননি বীরবাহা। তবে পরে মুখ খোলেন তিনি। ‘‘ঝাড়গ্রামের প্রতিটি গ্রামের মতোই নেতাই আমার গ্রাম। যতদিন দেহে প্রাণ থাকবে, নেতাই গ্রামের পাশে আমি থাকব। আমি লোক দেখানো তর্পণে বিশ্বাসী নই’’, জানিয়েছেন বীরবাহা।