এবার বাংলার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রাজ্যে
শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নজিরবিহীন উদ্যোগ প্রশাসনের। স্থির হয়েছে, রাজ্যের সব সরকারি-বেসরকারি স্কুলে হাম ও রুবেলার টিকা দেওয়া হবে নিখরচায়। ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ ছেলেমেয়েকে অতিরিক্ত একটি ডোজ দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যদপ্তরের বক্তব্য, কেন্দ্র চেয়েছিল কমিউনিটি বা এলাকা ধরে গণটিকাকরণ। কিন্তু নবান্নের নির্দেশ, স্কুল থেকে পাড়া-সর্বত্র টিকা দিতে হবে, যাতে একটা বাচ্চাও বাদ না পড়ে। সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে আগামী ৯ই জানুয়ারি থেকে ১১ই ফেব্রুয়ারি বাংলার ২৭টি স্বাস্থ্য-জেলার সব সরকারি হাসপাতাল, প্রাথমিক, ব্লক ও জেলা হাসপাতালে চলবে এই টিকাকরণ।
এপ্রসঙ্গে রাজ্যের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের নোডাল অফিসার ডা. অসীম দাস মালাকারের কথায়, ‘‘পনেরো বছর, অর্থাৎ দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও ছেলে বা মেয়ে যাতে টিকা থেকে বাদ না যায়, সে জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশেষভাবে সচেতন করা হয়েছে।’’ অসীমবাবুর কথায়, টিকা নেওয়ার পরে কোনও পড়ুয়ার জ্বর, মাথাব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে। তাই উদ্বিগ্ন না হয়ে জেনে নিতে হবে, কী করণীয়। তা জানানোও হয়েছে।’’ চিকিৎসকদের একাংশের অভিমত, শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্কুলে টিকাকরণ স্মরণকালে হয়নি। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের খবর, প্রথম তিন সপ্তাহ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে টিকাকরণ হবে। শেষ সপ্তাহে আইসিডিএস কর্মীদের মাধ্যমে এলাকায় টিকা দেওয়া হবে। স্কুলছুট বা কোনও কারণে স্কুলে যেতে পারছে না, এমন ছেলেমেয়েরাও যাতে টিকা পায়, তার সব ব্যবস্থা তৈরি। সব জেলায় টিকার ভায়াল পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রতি ৬-৯ বছর অন্তর অতিমারীর মতো আছড়ে পড়ে রুবেলা। অতি সংক্রামক ভাইরাসটি ১৯৬২ সালে বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল, রুবেলায় সংক্রমিত অনেক গর্ভবতী বিকলাঙ্গ সন্তান প্রসব করেন। আর সদ্য ফেলে আসা বছরে ইউরোপের দেশগুলোয় স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে হামের সংক্রমণ লাগামছাড়া। হাম ছড়িয়েছে মুম্বইয়েও। নভি মুম্বইয়ে তো হাম বা মিজলসের দাপট মারাত্মক আকার নিয়েছে। শিশুদের সুরক্ষা কবচ দিতে তাই আগাম প্রতিরোধের পথে নেমেছে বাংলা। এদিকে, হাম ও রুবেলা টিকাকরণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারেই জোর দিচ্ছে হাওড়া জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর ও পুরসভার স্বাস্থ্য কর্মীরাই প্রতিদিন এই কাজটি করছেন। জেলা স্বাস্থ্যদফতরের আধিকারিকরা মনে করছেন, শুধুমাত্র মাইকিং, পোস্টার, স্কুলগুলিতে শিক্ষক-অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকের মধ্যে দিয়েই এই প্রচার করলে হবে না। টিকা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সচেতন করতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে। হাওড়া জেলাতেও শুরু হচ্ছে এই টিকাকরণের কাজ। ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে টিকাকরণের কাজ। চলবে ১১ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মূলত ৯ মাস থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত ১১ লক্ষ ৭৭ হাজার ১২৩ জনকে দেওয়া হবে টিকা। এর মধ্যে স্কুল ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৭ লক্ষ ২৩ হাজার ৭৬৪ জন। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে তোড়জোড়।