চলতি বছরেই ফের ভোটযুদ্ধ বাংলায়। পাশাপাশি আগামী বছরই লোকসভা নির্বাচন দেশজুড়ে। ইতিমধ্যেই সরগরম রাজনৈতিক আবহ। প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সমস্ত দলগুলি। তবে এখনও সেই তথৈবচ দশা গেরুশিবিরের। ক্রমাগত আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সাংগঠনিক দুর্বলতা মাথাব্যথা বাড়িয়েছে বঙ্গ বিজেপির। সংগঠনকে চাঙ্গা করতে রীতিমতো উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ১৭ই জানুয়ারি বীরভূমের সিউড়িতে অমিত শাহের সভা, ৭ ও ৮ই জানুয়ারি বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার চণ্ডীতলায় সভা, ১৯ তারিখ শিলিগুড়িতে নরেন্দ্র মোদীর সভা করার কথা ছিল। কিন্তু এও জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার নাকি আকস্মিক সেই সমস্ত সফর বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আসলে পঞ্চায়েত নির্বাচন নয়, পাখির চোখ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনই। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে নাকি তেমনভাবে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে, এরকমই মনে করা হচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহলে। শোনা যাচ্ছে, বাংলায় গেরুয়া সংগঠন নাকি প্রায় লাটে উঠে গেছে। ৮০,০০০ বুথের মধ্যে ৪০ শতাংশ বুথে বিজেপির শক্তি নাকি খাতায় কলমে ঠেকেছে। বুথ/অঞ্চল ভিত্তিক সংগঠনের অভাব ধামা চাপা দিতে রাজ্য সরকার-বিরোধী বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ কর্মসূচী দেখিয়েও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে নাকি সন্তুষ্ট করতে পারেন নি সুকান্তরা।
উল্লেখ্য, গোষ্ঠীকোন্দলের জর্জরিত বঙ্গ বিজেপি। লাগাতার হার, দলবদলে বিপন্ন সুকান্ত-শুভেন্দুরা। জানা যাচ্ছে, বিক্ষুব্ধদের সামাল দিতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়ছেন রাজ্য নেতৃত্ব। তার উপর পুরাতন দিলীপ বনাম নতুন শুভেন্দুর চোরা লড়াই খবরের কাগজের প্রথম পাতায় জায়গা পাচ্ছে। এর প্রতিফলন ভোট ব্যাঙ্কেও পড়তে পারে, ফলে যথেষ্ট বিরক্ত নাড্ডা-শাহরা, এরকমই খবর মুরলীধর লেনের বাইরে। শোনা যাচ্ছে, জেরে মতুয়াগড়ে অন্তর্দ্বন্দ্বে ধুঁকছে বিজেপি। প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারপর সিএএ লাগু না হওয়ায় মতুয়াদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েই গেছে বলে শোনা যাচ্ছে। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। বিক্ষোভ এড়াতে এর আগেও বাতিল হয়েছিল ঠাকুরনগরে মতুয়াদের সভায় অমিত শাহর যোগদান। এবারও কী সেই একই কারণে সভা বাতিল করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? প্রশ্ন উঠেছে ওয়াকিবহাল মহলে। শুভেন্দুর ফ্লপ ডিসেম্বর তত্ত্ব, সরকার ফেলে দেওয়ার ফ্লপ ডেডলাইন, সংগঠন না করে আদালতনির্ভর লড়াই বিজেপিকে লজ্জায় ফেলেছে বলে ক্ষোভ নিচুতলার বিজেপি কর্মীদের। শোনা যাচ্ছে, এতে নাকি যথেষ্ট ক্ষুব্ধ অমিত শাহরাও। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অনুমান, শুধু সভা করে ড্যামেজ কন্ট্রোল সম্ভব নয়। তাই বাতিল হল মোদী-শাহের বঙ্গ সফর। বিজেপি সূত্রে খবর, ১৬-১৭ জানুয়ারি হায়দ্রাবাদে জাতীয় কর্মসমিতি রয়েছে। সেখানে হাজির থাকবেন তারা। তাই এই মুহূর্তে বঙ্গে আসছেন না তিন হেভিওয়েট। কারণ যাই হোক না কেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে হঠাৎ তিন হেভিওয়েট নেতার সভা বাতিল বা স্থগিত হওয়াতে যথেষ্ট চাপে বঙ্গ বিজেপি। রাজ্য নেতৃত্বের দল চালনা ক্রমশ অসন্তোষ ঘনীভূত হচ্ছে পদ্মশিবিরের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের। সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে এমনটাই।
