অঞ্জলি সিংহের হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখনও তোলপাড় রাজধানী শহর। প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। দিল্লীর পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় অরোরাকে কানঝাওয়ালায় ২০ বছর বয়সী অঞ্জলি সিং-এর মৃত্যুর ঘটনায় তথ্য-অনুসন্ধানী তদন্ত জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।। বিশেষ সিপি শালিনী সিংকে একটি দল গঠন করে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তাহলে কি এই নির্মম হত্যা ঘটনার সঙ্গে বিজেপির যোগ মেলায় ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামলেন তিনি? ঘনীভূত হয়েছে এমনই প্রশ্ন। নতুন বছরের শুরুতেই ভয়াবহ এক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দিল্লীর রাজপথ। সুলতানপুরীর রাস্তায় মিলেছে তরুণীর মৃতদেহ। নতুন বছরের শুরুতেই দিল্লীর এই ভয়ঙ্কর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুঙ্গে নিন্দার ঝড়। পুলিশ যখন তরুণীর দেহ উদ্ধার করে, তখন তরুণীর দেহে ছিল না কোনও পোশাক, শরীরের ছাল-চামড়া অবধি ছিঁড়ে গিয়েছে। জনৈক দীপক দাহিয়া ওই এলাকায় একটি কনফেকশনারির দোকান চালান। তিনিই ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী। তিনি বলেন, তিনি যখন ভোর ৩টে ১৮ মিনিটে নাগাদ দোকান খোলেন। হঠাৎ একটি গাড়ি থেকে তীব্র শব্দ শুনতে পান। প্রথমে ভেবেছিলেন টায়ার ফেটেছে। পরে বুঝতে পারেন, গাড়ির নীচে একজনের মৃতদেহ আটকে রয়েছে। দেহটিকে হেঁচড়ে নিয়ে যায় গাড়িটি।
প্রসঙ্গত, এরপর টানা ৯০ মিনিট পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন দাহিয়া, তিনি ২২ বার ফোন করেন পুলিশের জরুরিকালীন নম্বরে। একই রাস্তায় গাড়িটি চক্কর কাটছিল। বারবার ইউ-টার্ন নিচ্ছিল। যাতে গাড়ির আন্ডারক্যারেজে আটকে থাকা দেহটি যাতে বেরিয়ে যায়। বারবার ইউ-টার্ন নিয়ে ঘটনাস্থলে ফিরে আসতে দেখে শেষ পর্যন্ত তিনিও গাড়িটিকে ধাওয়া করেন। পিসিআর ভ্যান দেখতে পেয়ে সেখানেও পুলিশকে ঘটনার কথা জানান তিনি। গাড়ির নম্বরও দেন। দাহিয়ার অভিযোগ, পুলিশ গাড়িটিকে ধরার চেষ্টাও করেনি। সিসি ক্যামেরার নয়া ফুটেজেও একই ঘটনা দেখা গিয়েছে। ফুটেজে দেখা গিয়েছে, তৃতীয় ইউ-টার্নের সময় তরুণীর দেহ গাড়ির নীচ থেকে ছিটকে বেরিয়ে যায়। পরিবারের অভিযোগ, খুনের আগে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, দুর্ঘটনার সময় সঙ্গে ছিলেন তরুণীর এক বন্ধুও। থানার বাইরে রাস্তা অবরোধকারী জনতাও সোমবার একই অভিযোগ তোলে। মৃতার মা পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলছেন। পুলিশ নিছক দুর্ঘটনা বলে দায় এড়াতে চাইছে। সেই মর্মেই মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বিরোধীদের অভিযোগ, পাঁচ অভিযুক্তের অন্যতম মনোজ মিত্তল বিজেপির সদস্য, তাই ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর বিনয়কুমার সাক্সেনা এবং দিল্লী পুলিশের শীর্ষকর্তারা। গতকাল ধর্ষণের অভিযোগ খারিজ করে দেন দিল্লীর ডিসিপি হরেন্দ্র সিং। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা এই ঘটনায় সরব হয়েছে। কিন্তু দিল্লী পুলিশ তরফে বলা হচ্ছে, যারা ধর্ষণের ঘটনা রটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শোনা যাচ্ছে, সাংবাদিকদেরও নাকি হুমকি দেওয়া হচ্ছে। টুইট ডিলিট করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ধৃত পাঁচ অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হলে, ধৃতদের তিন দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার দিন তারা মদ্যপ অবস্থায় ছিল, স্বীকার করেছে এমনটাও।