বাংলার শিক্ষাক্ষেত্রে অভিনব পদক্ষেপ নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এক ক্লাস থেকে পরবর্তী ক্লাসে উঠলে এবার ছাত্র-ছাত্রীদের মিলবে বিশেষ সম্মান। তাদের জন্য এবার স্কুলে স্কুলে পালিত হবে ‘গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি’। এ বিষয়ে ১৩ দফা গাইডলাইন দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে বিস্তারিত নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে বলে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। প্রতিবছর রাজ্যজুড়ে প্রতিটি স্কুলে ২রা জানুয়ারি দেওয়া হবে এই সম্মান।
এই নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী,
১) প্রতিবছর ২রা জানুয়ারি বা তারপরে দিনগুলি থেকে করতে হবে এই অনুষ্ঠান।
২) এক ক্লাস থেকে পরবর্তী ক্লাসে ওঠা প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীদের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এই সম্মান জানাবেন।
৩) ক্লাস টিচার চকোলেট, মিষ্টি দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত জানাবেন তাঁর ক্লাসে।
৪) ক্লাস টিচার সব ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে করে নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাগত জানাবেন।
৫) সব নবাগত ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস টিচারকে তাঁদের পরিচয় জানাবেন।
৬) স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বা ক্লাস টিচার নবাগত ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের ইতিহাস বলবেন পাশাপাশি রাজ্য সরকার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের বই,স্কুলের ইউনিফর্ম, জুতো, স্কুলব্যাগ, স্বাস্থ্য পরিসেবা, মিড ডে মিল-সহ যে পরিষেবাগুলো প্রদান করছে সেগুলির সুবিধাও জানাবেন।
৭) প্রত্যেক স্কুলে একটি নির্দিষ্ট ফোটো কর্নার থাকবে। যেখানে সব ছাত্রছাত্রীদের ফোটো, জন্ম তারিখ-সহ লাগাতে হবে।
৮) ক্লাস টিচারের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের ফোটো তুলতে হবে প্রত্যেক বছর এবং সেটাও ফোটো কর্নারে লাগাতে হবে।
৯) প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর করা একটি ধন্যবাদ জ্ঞাপক চিঠি প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীদের দিতে হবে।
১০) ক্লাস মনিটর, কালচারাল মনিটর, স্পোর্টস মনিটর, মিড ডে মিল মনিটর-এর মনোনয়ন এই সময়সীমার মধ্যেই করতে হবে।
১১) গ্রুপ লার্নিং-এর ব্যবস্থাও করতে হবে এই সময়সীমার মধ্যেই।
১২) ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে বসার ব্যবস্থা এমনভাবেই করতে হবে, যেটা পঠন-পাঠনের স্বার্থে সবচেয়ে ভাল হয়।
১৩) এই অনুষ্ঠানের বা সম্মান জানানোর গোটা তথ্যচিত্র আকারে তৈরি করতে হবে এবং প্রত্যেক বছর স্কুলগুলিকে বুকলেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। মোট ১৩ দফা এই গাইডলাইন ইতিমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মূলত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেই এই ধরনের অনুষ্ঠান বিভিন্ন বেসরকারি বা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রচলিত রয়েছে। যদিও বিদেশে স্কুলগুলিতে এই ধরনের রীতি প্রচলিত ছিল আগে থেকেই। এবার সেই ব্যবস্থাই রাজ্যের স্কুলগুলিতে নিয়ে আসতে চাইছে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। পুরো বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের মতে, এর ফলে নতুন ক্লাসে উঠে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উৎসাহ আরও বাড়বে। ড্রপ আউট কমে যাওয়ার ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে বলেও মনে করছেন দফতরের আধিকারিকরা।