শুক্রবার জোকা থেকে তারাতলা পর্যন্ত মেট্রো রেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি, গতকালই আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করেছে হাওড়া-জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। সার্বিক এই প্রেক্ষাপটে যখন রাজনৈতিক কৃতিত্ব নেওয়ার দৌড় শুরু হয়েছে, তখন ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেল পর্ব। প্রশ্ন উঠছে যে, মমতা না থাকলে কলকাতায় এত মেট্রো হত কি?
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী মমতা তাঁর প্রথম পূর্ণাঙ্গ রেল বাজেট পেশ করতে উঠে কলকাতা মেট্রোর সম্প্রসারণের কথা ঘোষণা করেন। ট্রেজারি বেঞ্চে দাঁড়িয়ে সেদিন তিনি বলেছিলেন — ‘ভারতীয় রেলের একমাত্র মেট্রো পরিষেবা হল কলকাতা মেট্রো। টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া বাজার পর্যন্ত মেট্রো চলাচল শুরু হয়ে গেছে। নিউ গড়িয়া পর্যন্ত মেট্রো চলাচলও খুব শিগগির শুরু হয়ে যাবে।…মেট্রো পরিষেবাকে আরও মজবুত করতে বাজেটে আমি আরও কয়েকটি সম্প্রসারণ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করছি—জোকা-বিবাদী বাগ ভায়া মাঝেরহাট, নোয়াপাড়া-বারাসত ভায়া বিমানবন্দর, দমদম থেকে রাজারহাট হয়ে নিউ গড়িয়া, বরাহনগর থেকে দক্ষিণেশ্বর এবং বরানগর থেকে ব্যারাকপুর।’
আবার, তারও আগে বাজপেয়ী জমানায় প্রথম বার রেলমন্ত্রী হওয়া মমতা ২০০০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর পেশ করা বাজেটে শিয়ালদহ-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস শুরু করার ঘোষণা করেছিলেন। তার আগে কেবল হাওড়া-নয়াদিল্লী রাজধানী এক্সপ্রেস চলত। নতুন রাজধানী এক্সপ্রেস ছাড়াও হাওড়া-পুরুলিয়া, শিয়ালদহ-নিউ জলপাইগুড়ি, শালিমার-বাঁকুড়া, শিয়ালদহ-অমৃতসর সুপারফাস্ট পরিষেবা চালু করার ঘোষণা সেই বাজেটে করেছিলেন মমতা। তা ছাড়া ওই বাজেটেই বাংলায় অন্তত আরও এক ডজন ডাবলিং প্রজেক্ট ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এই রেল পরিষেবাগুলোর জন্য অনেকেই তৃণমূল নেত্রীকে মনে রেখেছেন। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, কলকাতায় মেট্রো পরিষেবার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে মমতার অবদান মাইলফলক হয়ে রয়েছে।
২০১০ সালের পর ২০১১ সালেও পূর্ণাঙ্গ রেল বাজেট পেশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা ছিল তাঁর পেশ করা শেষ রেল বাজেট। সেই বাজেটেও বৃহত্তর কলকাতায় মেট্রো রেলের আরও সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেছিলেন মমতা। রেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমানায় আরও কিছু প্রকল্প বা ট্রেন পরিষেবা উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। তা হল, দুরন্ত ও যুবা এক্সপ্রেস। তা ছাড়া সাবারবান রেলে লেডিস স্পেশাল তথা মাতৃভূমি এক্সপ্রেস চালু হয়েছিল মমতারই জমানায়। গত বিশ-বাইশ বছরে রেল বাজেটগুলি খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেল মন্ত্রী থাকার সময়েই বাংলা প্রচুর প্রকল্প পেয়েছে। লালু প্রসাদ বা নীতীশ কুমারের জমানায় বাংলার জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু জোটেনি।