ফের পদ্মশিবিরকে কড়া ভাষায় একহাত নিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, বুধবার অ্যালেন পার্কে বড়দিনের ক্রিস্টমাস ফেস্টিভালের উদ্বোধনী মঞ্চে বক্তৃতা দিতে উঠেছিলেন মমতা। সেখানেই নাসিরুদ্দিন শাহ-শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত বাংলা ছবি ‘প্রতিদান’-এর গানটির লাইন বলছিলেন মমতা। একটি লাইন ছিল, ‘‘…তোমারই ক্ষমা দিয়ে তুমি, ফোটাও পদ্ম করে তাকে।’’ সেখানেই থমকে গেলেন মমতা। বললেন, ‘‘তোমারই ক্ষমা দিয়ে তুমি, আপন করে নাও তাকে।’’ তার পরে বললেন, ‘‘কথাটা আমি একটু বদলে দিলাম।’’ কেন দিলেন, তা অবশ্য বলেননি মমতা। বলার প্রয়োজনও ছিল না। উপস্থিত সকলেই বুঝতে পারেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ‘পদ্ম ফোটাতে’ চাইছেন না। এ-ও বুঝতে পারেন, পদ্ম তথা বিজেপির প্রতি তাঁর যে রাজনৈতিক বিরোধিতা, এই বদল সেই কারণেই। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তার প্রস্তুতি নিয়ে সরগরম রাজ্য। জেলায় জেলায় চলছে সভা এবং পাল্টা সভা। বিরোধী-শাসকের আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণ। এর মধ্যেই বড়দিনের অনুষ্ঠানে মমতার বক্তৃতায় মিলল ভোট রাজনীতির ছোঁয়া। তবে ওটুকুই। এর পর বড়দিনের জন্য রাজ্য সরকার উৎসব পালনের কী কী কর্মসূচী নিয়েছে, তারই বর্ণনা দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলায় ক্রিস্টমাস ফেস্টিভালে কলকাতার বো ব্যারাক, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, চন্দননগর, ব্যান্ডেল, কৃষ্ণনগর ও বারুইপুর চার্চ-সহ ঝাড়গ্রাম, আলিপুরদুয়ার, হাওড়া, আসানসোল, বিধাননগরের মতো মূল জায়গাগুলিকে আলোর সাজে সাজানো হবে। করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও।
পাশাপাশি এদিন মমতা আরও এক বার মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলায় সর্বধর্মের প্রতি সমান ভালবাসার কথা। যা বাংলাকে দেশের অন্যান্য রাজ্যের থেকে আলাদা করে বলেই তাঁরা বিশ্বাস। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা শান্তি চাই, আমরা বিভেদ করি না। একাত্মবোধে বিশ্বাস করি। আর মনে করি বিভেদ মানেই সর্বনাশ। বড়দিনে আমার একটাই প্রার্থনা, বাংলাকে শান্তি, স্বস্তি, শক্তি, ভক্তি দিন। অন্ধকার থেকে আলোয় আসার সুযোগ করে দিন।’’ বুধবার অ্যালেন পার্কের অনুষ্ঠানের পর সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানেও যান মুখ্যমন্ত্রী। মমতাকে সম্প্রতি নিজেদের ‘অ্যালামনি’ (প্রাক্তনী) হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে জেভিয়ার্স। তার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দেন মমতা। তবে সেখানেও মমতার বক্তৃতায় শোনা যায় কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের রাজনীতির ইঙ্গিত। যিশু খ্রিস্টের বাণী উদ্ধৃত করে মমতা বলেন, ‘‘যিশু আমাদের শিখিয়েছেন কারও কাছে মাথা নত না করতে।’’ যিশুর দেখানো পথেই তিনি হাঁটার চেষ্টা করেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘যিশু সবাইকে নিয়ে চলতে বলতেন। বিভাজন পছন্দ করতেন না।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও এক বার জানিয়েছেন, ২৫শে ডিসেম্বর রবিবার পড়ায় ২৬শে ডিসেম্বর (সোমবার) একটি অতিরিক্ত ছুটি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ওই ঘোষণা আগেই করা হয়েছিল। ‘‘অন্য সরকার ২৫ ডিসেম্বরের ছুটি বাতিল করে দিলেও আমাদের সরকার কিন্তু অতিরিক্ত একটা ছুটি দিয়েছে’’, জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।