কঠিন অস্ত্রোপচারে সাফল্য অর্জন করে ফের নজির গড়ল এনআরএস হাসপাতাল। প্রবল সংশয় ও অনিশ্চয়তায় ডুবে ছিল গর্ভস্থ শিশুর জীবন। মায়ের পেটেই গলায় পাঁচটি প্যাঁচ লেগে গিয়েছিল অ্যাম্বিলিকাল কর্ডের। এবিষয়ে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মায়ের গর্ভে অ্যাম্বিলিকাল কর্ড জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা বিরল নয়। পেটের মধ্যে শিশু নড়াচড়া করলে এমনটা হয়। তবে তা এক-দুই প্যাঁচে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রুণা বলের কথায়, অ্যাম্বিলিকাল কর্ড গলায় পাঁচ প্যাঁচে জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা বিরল। এমনই দেখা গেল লেডি ডাফরিন হাসপাতালে। গলায় অ্যাম্বিলিকাল কর্ড জড়িয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে কমছিল শিশুর হৃদস্পন্দন। যা থাকার কথা একশো ত্রিশে তাই কমতে কমতে মিনিটে আশি। পঁচাত্তর। সত্তর। এরপর স্পন্দন বন্ধ হওয়ার আগেই মায়ের পেট থেকে বার করা হয়েছে শিশুটিকে। অল্পের জন্য প্রাণ ফিরে পেয়েছে সে। প্রথমবার অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা মৌসুমী মণ্ডল। লেডি ডাফরিন হাসপাতালে বছর তেইশের মৌসুমির স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে চিকিৎসকরা নর্মাল ডেলিভারির পরামর্শ দেন। সিজারিয়ান নয়, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শিশুর জন্মের বিষয়ে জোর দিচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্যদফতর। নর্মাল ডেলিভারিতে জরায়ু দিয়েই শিশুর মাথা টেনে বের করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সেখানেই সমস্যার সূত্রপাত হল।
প্রসঙ্গত, প্রসবের সময় এগিয়ে আসতে থাকলেও মৌসুমীর জরায়ুর দরজা খুলছিল না। কেন এমন হচ্ছে, তা জানার জন্য সিরিয়াল আল্ট্রাসাউন্ড করা হয় রোগীর। আল্ট্রাসাউন্ডের ছবি দেখে হতচকিত হয়ে যান চিকিৎসকরা। দেখা যায়, মায়ের পেটে গলায় ফাঁস লেগে গিয়েছে শিশুর। সে কারণেই মাথা নামছে না নীচের দিকে। ফাঁক হচ্ছে না জরায়ুর দরজাও। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রাজেশ বিশ্বাসের কথায়, বাচ্চা জন্মের সময় তার নাভির সাথে আম্বিলিক্যাল কর্ড সংযুক্ত থাকে। কর্ডের অন্য প্রান্তটি মায়ের জরায়ুর ভিতরের দেওয়ালে প্ল্যাসেন্টাকে সংযুক্ত করে। এই প্লাসেন্টাই শিশুকে মায়ের পেটের মধ্যে পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করে। সংযুক্ত আম্বিলিক্যাল কর্ড পুষ্টি বহন ও বর্জ্য নির্মূল করার পথ হিসাবে কাজ করে। কিন্তু পাঁচ প্যাঁচে শিশুর গলায় জড়িয়ে গিয়েছিল অ্যাম্বিলিকাল কর্ড। সন্দেহ হওয়ায় শিশুর হার্টসাউন্ড মনিটরিং করেন চিকিৎসকরা। করা হয় কার্ডিওটোকোগ্রাফি। দেখেন ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে শিশুর হৃদস্পন্দন। ডাঃ রাজেশ বিশ্বাসের কথায়, সাধারণত মায়ের পেটের মধ্যে শিশুর হৃদস্পন্দন থাকে মিনিটে ১৩০ থেকে ১৫০-এর মধ্যে। কমতে কমতে তা নেমে গিয়েছিল সত্তরে। দ্রুত জরুরি ভিত্তিতে সিজার অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়। ডাঃ রাজেশ বিশ্বাসের সঙ্গে অপারেশন টিমে ছিলেন ডাঃ প্রিয়া কুমারী। গলার ফাঁস কেটে বের করা হয়েছে শিশুটিকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাঁইত্রিশ সপ্তাহ চারদিনের মাথায় জন্ম নিয়েছে শিশুটি। জন্মের সময় তার ওজন ছিল আড়াই কেজির মতো। আপাতত কেটে গিয়েছে বিপদ। খুশি শিশুটির পরিবার-পরিজনেরা।