শুরু হয়েছিল অস্বাভাবিক পেটের যন্ত্রণা। যার জেরে ক্রমশ দানা বাঁধছিল মানসিক অবসাদ। সে জন্য ওষুধও খেতেন হুগলীর তরুণী। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ক’দিন ধরেই বাড়ছিল সমস্যা। কারণটা বোঝা যাচ্ছিল না। হঠাৎই একদিন রাত থেকে ব্যথায় কাতরাতে শুরু করেন ওই তরুণী। খেতে পারছিলেন না। তৎক্ষণাৎ স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখান থেকে রেফার করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগে। সেখানে এন্ডোস্কোপি করে দেখা যায়, লম্বা শঙ্কু আকৃতির একটি বস্তু আটকে আছে ক্ষুদ্রান্ত্রে। সন্দেহ হয় চিকিৎসকদের। অবশেষে তরুণী স্বীকার করেন যে, চারদিন আগে একটি কলম খেয়ে ফেলেছিলেন তিনি। সেটিই আটকে রয়েছে ডিওডোনামে। ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম এবং ক্ষুদ্রতম অংশ এই ডিওডেনাম। ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা এই নালীর সঙ্গে পিত্তনালী ও অগ্ন্যাশয় নালী যুক্ত থাকে। দ্রুত তরুণীকে নিয়ে আসা হয় সার্জারি বিভাগে। এসএসকেএমে চিকিৎসকরা বুঝে যান, দেরি করা সমীচীন হবে না। দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। কারণ গিলে ফেলা কলম ডিওডেনামকে ছিদ্র করে দিয়েছিল। সেই ফুটো দিয়েই বেরোতে শুরু করেছিল খাবার।
এরপর, টানা দু’ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে সেলাই করা হয়েছে ক্ষুদ্রান্ত্র। বের করা হয়েছে কলমটি। তরুণী যাতে আপাতত খাওয়া দাওয়া করতে পারে তার জন্য করা হয়েছে ফিডিং জেজুনোস্টমি। চিকিৎসকদের টিমে ছিলেন ডাঃ রণিত রায়, ডাঃ শ্রীজা বসু, ডাঃ স্নেহল তিওয়ারি, ডাঃ ইরফানা। এহেন অস্ত্রোপচারে অ্যানাস্থেটিস্টের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচারে অ্যানাস্থেটিস্টের দায়িত্বে ছিলেন ডাঃ সম্পদ বিশ্বাস। সার্জন ডাঃ রণিত রায়ের কথায়, মেয়েটি মানসিক অবসাদগ্রস্ত। প্রথমদিকে মেয়েটি বিষয়টি না বলায় বোঝা যাচ্ছিল না। কলমটির নিব ফুটো করে দিয়েছিল ক্ষুদ্রান্ত্রের দেওয়ালের অংশ। গ্যাস্ট্রো বিভাগে পেনটি বের করা সম্ভব ছিল না। সার্জারি বিভাগে এক্সপোলারটি ল্যাপারোটমিতে ধরা পরে পুরো বিষয়টি। ক্ষুদ্রান্ত্র অত্যন্ত পাতলা। ডাঃ নিশান্ত দেব ঘটকের কথায়, আলসারের কারণেও এই ক্ষুদ্রান্ত্র অনেক সময় ছিদ্র তৈরি হয়। একে বলা হয় ডিওডেনাল পারফোরেশন। ক্ষুদ্রান্ত্র ফুটো হয়ে গেলে খাবারগুলো পেটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। ঢুকে পড়বে ক্যাভিটিতে। তা থেকে শুরু হয় অভাবনীয় যন্ত্রণা। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলে ইন্সটিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি বিভাগে তরুণীর কাউন্সেলিং করা হবে বলেই জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে।