সফল হল বিরল অস্ত্রোপচার। এক শিশুর অনিশ্চিত জীবনকে নতুন আলোর দিশা দেখালেন এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কীভাবে? জানতে হলে ফিরে যাওয়া যাক মাস দুয়েক আগের কথায়। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে মালদহের এক দম্পতির কোল আলো করে এসেছিল শিশুকন্যা। কেঁদেই চলছিল সে। খেতে পারছিল না কিছুই। যখনই কাঁদছিল বুকের মাঝখানের অংশটা ঢুকে যাচ্ছিল ভেতরে। জন্ম থেকেই নীল সারা শরীর। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, এর নাম ল্যারিঙ্গোম্যালেশিয়া। সাধারণত অপরিণত শিশুদের শ্বাসনালীর উপরের গঠন ঠিকমতো সম্পূর্ণ হয় না। অত্যন্ত নরম সে অংশটা কাঁদার সময় বা নিশ্বাস নেওয়ার সময় চুপসে ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। অধিকাংশ শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ঠিক হয়ে যায়। উপুড় করে শুইয়ে দিলেও সমস্যা ধীরে ধীরে কমে। কিন্তু এক্ষেত্রে শিশুটিকে সেভাবে শুইয়েও কোনো সুরাহা হচ্ছিল না। জন্ম থেকেই নিম্নমুখী ছিল অক্সিজেন স্যাচুরেশন। শ্বাসকষ্ট এতটাই, নীল হয়ে যাচ্ছিল শরীর। স্বাভাবিক ভাবেই নিয়ে যাওয়া হল নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে।
কিন্তু এভাবে আর কতদিন? উদ্বেগ বাড়ছিল দম্পতির। চিকিৎসকরা দেখলেন, জটিল এক অস্ত্রোপচার করে বাঁচানো যাবে শিশুটিকে। ট্রান্সসার্ভিকাল এপিগ্লটোপ্লাস্টি। কিন্তু সে অস্ত্রোপচারের যন্ত্র নেই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। এসএসকেএম হাসপাতালের ইন্সটিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগ এখন দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা উৎকর্ষ কেন্দ্র। ডিরেক্টর ডাঃ অরুণাভ সেনগুপ্তর প্রচেষ্টায় সে যন্ত্র এসেছে প্রতিষ্ঠানে। খবর যায় ইন্সটিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগে। তৈরি হয় মেডিক্যাল বোর্ড। নীলরতনে শিশুটিকে দেখতে যান প্রফেসর ডাঃ দেবাশিস বর্মন। এসএসকেএম এর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চিকিৎসা পরিভাষায় এ অসুখের নাম সিভিয়ার ইনট্র্যাক্টটেবল ল্যারিঙ্গোম্যালেশিয়া। শিশুটিকে বাঁচাতে অপারেশনের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচার টিমে ছিলেন ডাঃ দেবাশিস বর্মন, ডা. শুভদীপ করঞ্জাই, ডাঃ সৌত্রিক কুমার। অ্যানাস্থেশিস্টের ভূমিকায় ছিলেন ডাঃ অনির্বাণ দাস, ডাঃ কবীর হুসেন, ডাঃ মেঘা চট্টোপাধ্যায়। শ্বাসনালীর যে অংশটা ঢুকে যাচ্ছে, সেটাকে বাইরে থেকে জিভের সঙ্গে সেলাই করে দেওয়া হয়। রাখা হয় কড়া পর্যবেক্ষণে। এরপর নল দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছিল শিশুটিকে। অস্ত্রোপচারের দু’সপ্তাহ পর কেটে দেওয়া হয় সেলাই। অস্ত্রোপচারের পর শিশুটিকে কড়া পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। ডাঃ সুচন্দ্রা মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে সেই শিশুকন্যা ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠে। খুশি তার বাবা-মা। চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ঝরে পড়ছে তাঁদের গলায়।