একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে থেকেই অন্তর্দ্বন্দ্ব পিছু ছাড়ছে না গেরুয়াশিবিরের। দলীয় কোন্দল বারবার বিপাকে ফেলেছে বঙ্গ বিজেপিকে। এবার ফের তা প্রকাশ্যে এল। রাজ্যে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে মতুয়া প্রতিনিধি না-থাকা নিয়ে অনেক দিন আগেই রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের। সেই ক্ষোভ যে এখনও প্রশমিত হয়নি, তা আরও একবার খোলসা করে দিলেন শান্তনু নিজেই। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর মতান্তরের প্রভাব পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে পড়তে পারে বলে দলের অন্দরে যে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে, তা খানিকটা বাড়িয়েই দিলেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ। সাফ জানালেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে মতুয়ারা বিজেপির সঙ্গে থাকবে কি না, সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। যা বলার, বলবেন রাজ্য স্তরের নেতারাই। স্বাভাবিকভাবেই শান্তনুর এহেন মন্তব্যের পর জোর জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
প্রসঙ্গত, রাস উৎসব নিয়ে রবিবার সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘের বৈঠক ছিল ঠাকুরবাড়িতে। সেই বৈঠকে যোগ দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির পাশেই থাকবেন মতুয়ারা? তার জবাব দিতে গিয়ে সাংসদ বলেন, ‘‘এর উত্তর ভাল দেবেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। কী চলছে আর কী চলছে না, আমি সত্যিই কিছু জানি না। রাজ্যের নেতাদের জিজ্ঞাসা করা হোক। তাঁরাই বলতে পারবেন।’’ উল্লেখ্য, দলের পদাধিকারীমণ্ডলী এবং জেলা সভাপতিদের তালিকা প্রকাশ্যে আসার পরেই রাজ্য বিজেপির অন্দরে কোন্দল শুরু হয় চলতি বছরের গোড়ায়। হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছিলেন পাঁচ মতুয়া বিধায়ক। শান্তনুকেও দেখা গিয়েছিল শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিতে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে রাজ্য পদাধিকারীমণ্ডলীতে মতুয়া প্রতিনিধি আনার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি মানা হয়নি। দলীয় সূত্রে খবর, তার পর থেকে শান্তনুকে দলের কোনও কর্মসূচীতেও সেই ভাবে দেখা যায়নি। অনুপস্থিত ছিলেন দলের চিন্তন শিবিরেও।
পাশাপাশি দলীয় সূত্র জানাচ্ছে যে, সিএএ কার্যকর না-হওয়া নিয়েও প্রবল ক্ষুব্ধ শান্তনু। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, করোনাকালের পর দেশে সিএএ আইন কার্যকর করা হবে। অতিমারীর দাপট থিতু হওয়ার পরেও তা না-হওয়ায় ঘনিষ্ঠমহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তবে রবিবার সিএএ প্রসঙ্গে শান্তনু বলেন, ‘‘সিএএ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিরোধীদের দায়ের করা মামলার শুনানি চলছে। তার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত সিএএ কার্যকর করা সম্ভব নয়।’’ শান্তনুর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর আশাবাদী, মতুয়া ভোট তৃণমূলের পাশেই থাকবে। ‘‘মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের কাছ থেকে সরে গিয়েছিল। তবে গত বিধানসভা নির্বাচনে আবার তা তৃণমূলে ফিরে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়াদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মতুয়ারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই আছেন’’, জানিয়েছেন মমতাবালা।