হঠাৎ শীতের কাঁপুনি অনুভব করতে শুরু করেছিল দক্ষিণবঙ্গবাসী। ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’য়ের কারণে দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলী জেলায় কালীপুজোর রাতে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ঘন্টায় ৯০ কিমি বেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বওয়ারও সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু শেষমেশ তা হয়নি। সেভাবে বৃষ্টিও হয়নি, দমকা হাওয়াও রাত ১০টার আশেপাশে গিয়ে থমকে গিয়েছিল। আর রাত ১২টার পর থেকেই শুরু হয় শিরশিরে ঠাণ্ডা। আর সেই রেশটা দিনভর রয়ে গিয়েছিল মঙ্গলবারও। বুধবারও তেমন পরিবর্তন হয়নি আবহাওয়ার। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছিল, তাহলে কি শীত এসে গেল বাংলায়? যদিও আলিপুর আবহাওয়া দফতরের দাবি, এই আবহাওয়া কার্যত সিত্রাংয়ের সাইড এফেক্ট। শীত এখনও বহু দূরে। শিরশিরানি ভাব বা ঠাণ্ডা লাগা সাময়িক একটা ছবি মাত্র। খুব শীঘ্রই আবার গলদঘর্ম অবস্থা ফিরছে বাংলায়। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের জেরে চরম সতর্কতা জারি করা হয়েছিল এপার বাংলার ৫টি মহকুমা এলাকায়। যদিও সিত্রাং এপার বাংলার পথে আসেনি। বরঞ্চ তা গিয়েছে ওপার বাংলার পথে। সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের একটা বড় অংশ। সেখানে সরকারি হিসাবে এখনও পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবথেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে। সিত্রাংয়ের ল্যান্ডফলের সময় হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর তা উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অভিমুখে বরাবর এগিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কমপক্ষে ১০ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওপার বাংলায়। সেই সঙ্গে ৬ হাজার হেক্টরেরও বেশি চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাছের চাষ হয়, এমন বহু জলাজমিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের দাপটে হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। ভাসান চরে ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাদের রিফিউজি ক্যাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু এপার বাংলায় সে সব কিছুই হয়নি। উল্টে হাজির চোরা শীত। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বেশ কিছুটা কমেছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের দাবি, এই সাময়িক পারদ পতন শীতের ইঙ্গিত নয়। আপাতত বঙ্গে শীতের কোনও সম্ভাবনা নেই। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে শীত অনুভূত হবে না বাংলায়। আগামী কয়েকদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কম থাকায় হালকা শীতের শিরশিরানি অনুভূত হবে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। এটা সম্পূর্ণই সাইক্লোন সিত্রাংয়ের আফটার এফেক্ট। কয়েকদিনের মধ্যেই আবার আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বিশেষ করে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আপেক্ষিক আর্দ্রতার ফের বৃদ্ধি পাবে। বাতাসে গুমোট ভাব ফিরে আসবে। বাংলায় পুরোপুরি শীত প্রবেশ করবে আগামী ১৫ই ডিসেম্বর থেকে। তার আগে সকাল বেলা কিংবা অফিস টাইমে শীত অনুভূত হবে না। যদিও নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভোরের দিকে কিছুটা হলেও শীতের আমেজ পাবেন কলকাতাবাসী। আগামী চার থেকে পাঁচদিন শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে কলকাতায়। তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামবে না। দিনের বেলা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকবে ৩১ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতের দিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকবে ২১ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোরবেলা আগামী কয়েকদিন শীতের আমেজ অনুভূত হলেও তা স্থায়ী হবে না। কলকাতার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলা যেমন দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলীতেও ভোরের দিকে পারদ পতনের জেরে হালকা শীতের আবহ রয়েছে। যদিও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাওয়ার পরিবর্তন হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস।
